
নওগাঁয় সর্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভের পাশাপাশি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কৃষক লিটন হোসেন। একই জমিতে একাধিক ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তিনি। তার দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও উদ্বৃদ্ধ হয়ে চাষাবাদ শুরু করেছে। নতুন এ পদ্ধতিতে সারাবছর সবজি চাষ করা সম্ভব বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। সর্জন পদ্ধতি সম্প্রসারণ হলে সারাবছর সবজি চাষাবাদ হবে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে অল্প জমিতে বেশি লাভ করা সম্ভব। এতে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসার পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে।
সর্জন পদ্ধতিতে একইসঙ্গে মাছ এবং সবজি চাষ করা যায়। এটি একটি পরিবেশ-বান্ধব এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে, বৃষ্টির পানি বা বন্যার পানি জমে থাকার সম্ভাবনা কমে যায় এবং গাছের গোঁড়ায় পচন রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে, অল্প জমিতে বেশি লাভ করা সম্ভব।
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের মঙ্গলপুর গ্রামের কৃষক লিটন হোসেন। এক ফসলি জমিতে সর্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। জমির কিছু অংশ উঁচু করে সেখানে বেড তৈরি করে মাচায় সবজি চাষ করছেন। আর নিচু অংশে পানি ধরে রেখে সেখানে দেশীয় বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করছেন। এলাকায় ১০ জন কৃষক এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছে। সর্জন পদ্ধতির পাশাপাশি ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি চাষে খরচ কমেছে। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত হচ্ছে কৃষকরা। এতে একই জমি থেকে একাধিক ফসল পেয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। পাশাপাশি তার খামারে সারা বছর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে অন্তত পাঁচজন শ্রমিক।
কৃষক লিটন হোসেন বলেন, বেশ কিছু জমি ইজারা নিয়ে শাক-সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। এরমধ্যে দুই বিঘা জমি অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় শুধুমাত্র একটি ফসল চাষ করা যেতো। বরগুনা জেলা ঘুরতে গিয়ে দেখেছিলাম সর্জন পদ্ধতিতে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন। তারপর এলাকায় এসে এ সর্জন পদ্ধতিতে চলতি বছর জমি প্রস্তুত করা হয়। এরপর থেকে মাচাতে লাউ চাষ করা হচ্ছে এবং নালার পানিতে মাছ চাষ।
তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে সফলতা পেয়েছি। যেখানে লাউ চাষে খরচ হয়েছে অন্তত ৭০ হাজার টাকা। চার মাসের এ ফসল থেকে আয় আসবে অন্তত দেড় লাখ টাকা। এ পর্যন্ত লাউ বিক্রি হয়েছে অন্তত ৯০ হাজার টাকা। এছাড়া মাছ থেকে আসবে আরও দেড় লক্ষাধিক টাকা। মাছ চাষেও খাবার তেমন দিতে হয় না। আবার পরের বছর নতুন করে মাচা তৈরি করতে হবে। এতে খরচ থেকে কিছুটা সাশ্রয় হবে। পাশের আরও ১৪ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। যেখানে ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত লক্ষাধিক টাকার পেঁপে বিক্রি হয়েছে। এক মৌসুমে পেঁপে বিক্রির আশা ৪৫ লাখ টাকা।
শ্রমিক মাহমুদ বলেন, লিটন ভাইয়ের খামারে শাক-সবজি (লাউ ও পেঁপে), বরই ও পেয়ারা বাগান আছে। সারা বছরই এখন কাজ হচ্ছে। প্রতিদিন কাজ করে মজুরি মিলে ৫০০ টাকা। মোশারফ হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, পাশের জমি লিটন ভাই তার নিচু জমিতে সর্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন। তার দেখে আমিও এক বিঘা জমিতে এ পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেছি। এতে মোটামুটি লাভবান হওয়া যাচ্ছে। বর্ষাইল ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার রতন আলী বলেন, সর্জন এ পদ্ধতিতে গাছের গোঁড়ায় পচন রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায় এবং চাষাবাদে মাটির উর্বরতা বজায় থাকে। এটি পরিবেশ-বান্ধব এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতি। এতে একই জমি থেকে দ্বিগুন ফলন পাওয়া সম্ভব হয়। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
নওগাঁ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুল ইসলাম বলেন, অপেক্ষাকৃত যেসব জমি নিচু এবং জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকে যেখানে এক ফসল ছাড়া দ্বিতীয়বার চাষাবাদ করা যায় না। সেখানে সর্জন পদ্ধিতে সারা বছর সবজি চাষ করা সম্ভব। সর্জন পদ্ধতিতে জমিতে নালা করে এবং কিছু অংশ উঁচু করা হয়। সেখানে মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষ এবং নালায় পানি রেখে মাছ চাষ করা সম্ভব। এতে একইসঙ্গে একাধিক চাষাবাদ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পায় এবং অনাবাদি বা পতিত জমি ফসলে রূপান্তর হয়। এতে কৃষক ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি তার আয় বৃদ্ধি করতে পারে। কৃষি অফিস থেকে সর্জন পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করা হচ্ছে।