
কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চাকরিচ্যুত স্থানীয় শিক্ষকরা। আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক মো. শামীম বলেন, গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ৪টার দিকে জনদুর্ভোগ বিবেচনায় অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে আগামীকাল আন্দোলন উখিয়া নাকি কক্সবাজারে করা হবে তা নিয়ে রাতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চাকরিচ্যুত স্থানীয় শিক্ষকরা চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে উখিয়ার কোটবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। ফলে সকাল থেকেই ব্যস্ত এই মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গাড়ির জট তৈরি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামেন। যদিও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়ক অবরোধ ও অনশন অব্যাহত রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।
দুপুরের পর কোটবাজার এলাকায় উপস্থিত হন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সাইফুদ্দিন শাহীনসহ জেলা প্রশাসন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কর্মকর্তারা। পুলিশ সুপার সাইফুউদ্দিন বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের কিছুটা ধৈর্য্য ধরা উচিত বলে আমি মনে করি। যেসব শিক্ষকরা চাকরি হারিয়েছেন তাদের ব্যবস্থা হচ্ছে। তারা চাচ্ছে একবারেই যেন সব শিক্ষকদের ব্যবস্থা করা হয়। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি ১৫০ জনের ব্যবস্থা হয়েছে। ‘একটি এনজিও তাদের চাকরির ব্যবস্থা করেছে। বাকিদের জন্যও আবেদন করা হয়েছে। তবে তাদের আরও কিছু দাবি আছে যেগুলো শুনতেই এখানে এসেছি।’ আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, বিনা কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত স্থানীয় ১ হাজার ২৫০ শিক্ষককে ছাঁটাই করা হয়েছে। তারা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। চাকরি হারানো স্থানীয় শিক্ষকদের অভিযোগ, অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে ‘তালবাহানা’ করছে এনজিওগুলো। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েও কোনো সুরাহা না হওয়ায় ফের আন্দোলনে নেমেছেন তারা। চাকরিচ্যুত শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা মানবিক সংস্থার অধীনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন। হঠাৎ করেই তাদের বিনা কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে জীবিকা হারিয়ে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। এদিকে অবরোধের কারণে সকাল থেকে কোটবাজার স্টেশনে সড়কের উভয় দিকে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ শত শত গাড়ি আটকা পড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়া সাধারণ যাত্রী ও চালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কোটবাজার এলাকার অটোরিকশা চালক নুরুল আলম বলেন, সড়ক অবরোধের কারণে পাঁচ ঘণ্টা তাকে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। যাত্রীরাও নেমে চলে গেছে। বেলা ২টার দিকে ট্রাক চালক রহিম উদ্দিন বলছিলেন, সকাল ৭টা থেকে বসে ছিলেন খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে। তবে স্থানীয় শিক্ষকদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দেশি শিক্ষকদের বাদ দিয়ে রোহিঙ্গা শিক্ষকদের চাকরির ব্যবস্থা করা এটা তো ঠিক না।’ তবে এ বিষয়ে জানতে সকাল থেকে বেশ কয়েকবার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।