
আদা ভেষজ ঔষধিগুণে ভরপুর ও মসলা জাতীয় একটি ফসল। রন্ধনশালায় নানা খাবারে স্বাদ বাড়াতে এর যেন জুড়ি নেই। ওষুধশিল্পে কাঁচামাল হিসেবে এবং ভোক্তার কাছে আদার চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় চাষ পদ্ধতি পরিবর্তন হচ্ছে।
মাটিতে আদা চাষ নানা কারণে ফলন কম হওয়ায় এখন বস্তায় শুরু হয়েছে। এ আধুনিক পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষে জমিতে পানি থাকে না, বস্তা নরম থাকে ঘাস কম হয় সেইসঙ্গে থাকে না কোনো ধরনের ঝুঁকি ও বরং ফলন ভালো হয়। এরইমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বস্তায় আদা চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করে বেশ সফলতার মুখ দেখছেন মো: বিল্লাল ভূঁইয়া নামে এক উদ্যোক্তা। শখের বশে বাড়িসংলগ্ন জায়গাতে বস্তায় আদা চারা রোপণ করে ভালো ফলন হওয়ায় তিনি এ সফলতা দেখছেন। বস্তায় আদা চাষে তার এই সফলতা দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমার্জেন্সি এসিসটেন্স প্রজেক্ট (ফ্রিপ) এর আওতায় প্রদর্শনিতে এ চাষ করা হয়।
বিল্লাল ভূঁইয়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের মোগড়া গ্রামের গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি সেনা বাহিনীতে কর্মরত আছেন। তার অবর্তমানে মা তাসলিমা বেগম সার্বিক পরিচর্যাসহ দেখবাল করছেন।
বিল্লাল ভূঁইয়ার মা তাসলিমা বেগম বলেন, গত বছর শখের বশে বাড়ির আঙিনায় ৭টি বস্তায় আদা আবাদ করি। এতে ভালো ফলন পেয়েছি। এতে আমার উৎসাহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এরপর আমার ছেলে উপজেলা কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কৃষি অফিসের সার্বিক সহায়তায় এ মৌসুমে সাড়ে ১৫ শতাংশ জমিতে ১০০০ বস্তায় আদা চাষ করি। এরমধ্যে আমার রয়েছে ৫০০ বস্তা। বাকি ৫০০ বস্তা কৃষি অফিস দিয়েছে। সেইসঙ্গে সার ওষুধসহ অন্যান্য উপকরণ সহায়তা হিসেবে দিয়েছে। এ চাষ করতে মোট ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে বাগানের অবস্থা খুবই ভালো। বস্তায় আদা গাছের যে ফলন দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় প্রতি গাছে কমপক্ষে ১ কেজির উপর ফলন পাওয়া যাবে। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে এই আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকার উপর। এতে ২ লাখ টাকার উপর বিক্রি হবে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, বস্তায় আদা চাষ করা খুব সহজ একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে চাষে খরচ এবং রোগবালাই কম হয়। সেইসাথে কম হয় রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার। তাছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় বস্তা স্থানান্তর করা যায়। কৃষি অফিস প্রতিনিয়ত এ চাষে সার্বিক সহযোগিতা করছেন। তাদের অব্যাহত কর্মসূচিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে বর্তমানে অনেকেই এ পদ্ধতিতে আদা চাষে ঝুঁকছে। তিনি আরও বলেন, সামনে আরও ৫ শতাধিকের উপর বস্তায় চারা লাগানোর আমার পরিকল্পনা রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে। গত বছরের চাইতে এবার ৪ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বিশেষ করে ছায়াযুক্ত পরিত্যক্ত জায়গাতে এই পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। এদিকে সরেজমিন বাগানে গিয়ে দেখা যায় রাস্তা সংলগ্ন জায়গায় ও বাড়ির আঙিনায় সারি সারি বস্তায় লাগানো আছে আদা। আদা গাছগুলোও বেশ সুন্দর পাতার রং আর সতেজতা দেখেই যে কেউ বুঝতে পারবে যে এ বাগানে ভালো ফলন হবে। স্থানীয় বাসিন্দা মো. সুজন ভূঁইয়া বলেন, বিল্লাল যখন বস্তার মধ্যে আদা চাষ শুরু করে তখন ভেবেছিলাম এভাবে আদা হয় কি না। খালি জায়গাতে পরিশ্রম করছে। কিন্তু এখন দেখছি আমার ধারণা ভুল ছিল। আদা অনেক ভালো হয়েছে। এখন আমিও জমিতে আদা চাষ করার চিন্তা করছি। কৃষক মো: আলাউদ্দিন বলেন, আমি আগে মাটির নিচে আদা চাষ করতাম। কিন্তু ফলন ভালো না হওয়ায় চাষ করা বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু বস্তায় আদার ফলন দেখে এ চাষ করতে আমার উৎসাহ বেড়েছে। আখাউড়া উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় প্রায় ১৮ হেক্টর জমিতে আদাচাষ হয়েছে। বস্তায় আদা চাষে কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় অনেকেই এ চাষে ঝুঁকছেন। ‘বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। আবার অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয়ও নেই। একটি ফসল তোলার পর আলাদা করে সার ছাড়াই আরেকটি ফসল ফলানো যায়। বস্তায় চারা রোপণের পর ৮ মাসের মাথায় ফলন পাওয়া যায়। এ চাষ করতে কৃষককে বস্তা সার, ওষুধসহ অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে। ফলন ভালো রাখতে মাঠ কর্মীরা প্রতিনিয়ত বাগান পরিদর্শন করছে।