
ফরিদপুরের জেলায় এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু এখন পাট ধুয়ে শুকিয়ে সোনালি আঁশ এখন ঘরে তুলছেন কৃষক। তবে শুধু আঁশ নয়, পাটকাঠিতেও তারা দেখছেন আশা। কেননা, পাটের সঙ্গে কদর বেড়েছে পাটকাঠিরও। বাড়ির সামনে, পাকা সড়ক কিংবা মাঠ-ঘাট যেখানে চোখ যায় সেখানেই চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।
প্রাচীনকাল থেকে রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজ, গৃহস্থালি সামগ্রীসহ বিভিন্ন সৌখিন পাটজাত পণ্য তৈরির কাজে পাটকাঠির জুড়ি নেই। বর্তমানে বিভিন্ন পার্টিকেল বোর্ড তৈরি ছাড়াও বিভিন্ন কলকারখানায় পাটকাঠি ব্যবহার হচ্ছে। যার ফলে পাটকাঠির মূল্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে। একসময় শুধুমাত্র জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হতো পাটকাঠি। এখন পাটকাঠির বহুমুখী ব্যবহারের কারণে কদর বেড়েছে কয়েকগুণ। বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালি, সালথা নগরকান্দাসহ কয়েকটি উপজেলা খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষক পাট ও পাটকাঠি শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত। তারা এখন পাটকাঠি বেশ যত্নের সঙ্গে মজুত করে রাখছেন। ১শ’ আঁটি পাটকাঠি ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, আগে পাটকাঠির ব্যবহার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছিল শুধু জ্বালানি হিসেবে। আর কিছু ভালো মানের পাটকাঠি পানের বরজের আর ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন আর মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না পাটকাঠি। বিশ্ববাজারে পাটকাঠির চাহিদা বাড়ায় আঁশের পাশাপাশি কাঠির দামও ভালো পাওয়া যায়। অনেক কৃষক পাটের দাম খুব একটা না পেলেও পাটকাঠির দাম দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
বোয়ালমারী উপজেলার রেনিনগর গ্রামের পাটচাষি হাসান মিয়া বলেন, গত কয়েক বছর আগেও পাটকাঠির তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন বেশ চাহিদা। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাটকাঠি কিনছেন, ভালো দামও দিচ্ছেন।
সালথা উপজেলার নোট খোলা গ্রামের পাট চাষি হোসেন জানান, পাটকাঠি এক সময় শুধু রান্না-বান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া ও ছাউনির কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন এ পাটকাঠি দেশের পানের বরজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে কার্বন ফ্যাক্টরির কারণে পাটকাঠির চাহিদা ও মূল্য বেড়েছে। মধুখালী উপজেলার বাগাট গ্রামের আলী নামের এক পাটচাষি বলেন, বিভিন্ন দেশে পাটকাঠির ছাই কার্বন পেপার, কম্পিউটার প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিনের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও খেতের সার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত পাটকাঠির চাহিদা দেশের পাশাপাশি বাড়ছে বিশ্ব বাজারেও। সাতক্ষীরা এলাকা থেকে আসা পাটকাঠি ব্যবসায়ী মোস্তফা সেখ বলেন, তারা ৭-৮ বছর ধরে ফরিদপুর থেকে পাটকাঠির ব্যবসা করছেন।
আগে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটকাঠি কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতেন তারা। কিন্তু বর্তমানে জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক কার্বন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। এই জন্য ফরিদপুর অঞ্চলের পাটকাঠি দিয়ে এসব ফ্যাক্টরির চাহিদা মেটানোই কষ্টসাধ্য। তাই তারা আর আগের মতো পাটকাঠি কিনতে পারেন না। কারণ বর্তমানে পাটকাঠির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি। অনেকেই এখন পাটকাঠির ব্যবসা করে জীবকা নির্বাহ করছেন। বিল্লাল খান নামে এক ব্যক্তি বলেন, বিগতদিনে আমরা রান্নার জ্বালানি হিসেবে, বাড়িঘর ও সবজি খেতের বেড়া, মাচা, পানবরজ তৈরিতে ব্যবহার হওয়া পাটকাঠি এখন আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এই পাটকাঠি থেকে আয় ভালো হচ্ছে। বড় বড় কোম্পানির এজেন্ট, ব্যবসায়ীরা এসে গ্রাম থেকে এটি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে।