
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সবজিরখেত। ফলে বাজারে শাক-সবজির সরবরাহ কমিয়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। এতে গ্রাহকদের বাড়তি দামে শাক-সবজি কিনতে গিয়ে হিমশিমে পড়েছেন। সবজির পাশাপাশি মুরগি ও হাঁসের ডিমের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
সরেজমিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর ও উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার কাঁচাবাজার ও দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ঢ্যাঁড়স, পটোল, বরবটি, বেগুন, উস্তা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গার, ধুন্দল কাঁকরোল, কাঁচা পেঁপে, পটোল ও বেগুন থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই অবস্থা। বাজারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত কিছু কিছু সবজি বিক্রি করছেন দোকানদাররা। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ প্রায় ৩২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে সবজির খেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা বেকায়দায় রয়েছেন। জমিতে পানি ওঠায় সবজি তুলতে পারছে না। আবার জমিতে সবজি নষ্ট হচ্ছে। সেজন্য পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ আগের তুলনায় কমেছে। গত সপ্তাহে যেখানে প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ছিল ২০০ টাকা এখন তা বেড়ে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি পিস চালকুমড়া ৭০ টাকা, লাউ ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়ার ফালি ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সবজির সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিমের দাম। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১৪০ টাক, এখন বেড়ে হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। একমাস আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে সবজি কিনতে আসেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাজারে যেভাবে সবজি ও ডিমের দাম বাড়ছে, সেখানে বেতন বাড়েনি। বাজার করতে এতে হিমশিমে পড়তে হয়। চার সদস্যের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। শুধু আলামিন নন, বাজারে আসা ক্রেতাদের সবাই সবজির চড়া দামে নাকাল। অনেকে দাম বেশি হওয়ায় সবজি কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার সবজি না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। কাজল সরকার নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, আয় সীমিত, টানাটানির সংসার। এরমধ্যে কোনো ক্ষেত্রে বেশি খরচ হলে অন্যদিকে টান পড়ে যায়। সবজির মূল্যবৃদ্ধি আসলেই আমাদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগের চেয়ে সবজি কেনা কমিয়ে দিয়েছি। তবে দু-এক কেজি না কিনলে তো রান্না চলবে না। অল্প অল্প করে নিচ্ছি। বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে এখন সবজির উৎপাদন আর সরবরাহ কম। তাই দাম বেড়েছে।
সবুজ হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, শীতের মৌসুমে যেমন সবজির দাম কম থাকে, তেমনি বৃষ্টির মৌসুমে সবজির দাম বেশি থাকে। এটি মেনে নিয়ে চলতে হবে। কারণ এখন কম উৎপাদনের মৌসুম চলছে। এসময় আবহাওয়ার কারণে জমিতে সবজি চাষ কম হয়, ফলে সরবরাহও কমে যায়। এরমধ্যে অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে অনেক এলাকার সবজিখেত তলিয়ে গেছে। এ কারণে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। ডিমের দামের বিষয়ে মোহাম্মদপুরের কাজল ভ্যারাইটিজ দোকানির মালিক আশরাফুর ইসলাম বলেন, বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষ ডিম বেশি খাচ্ছেন, ডিমের উৎপাদনের সঙ্গে চাহিদার ফারাক তৈরি হয়েছে। আর এই সুযোগে পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর আমরা খুচরা বিক্রেতা, পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে।
সবজির পাশাপাশি সপ্তাহ ব্যবধানে মাংসের দাম বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগি ৩২০-৩৪০ টাকা, সাদা কক ৩০০ টাকা, লাল কক ২৮০-৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে মুরগির। তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত আছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায়। ১ কেজি ইলিশ ২ হাজার ২০০ টাকা, ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০ টাকায়, কাতল ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩০, কৈ ২০০-২২০ এবং পাবদা ও শিং বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। আর চাষের ট্যাংরা, কাঁচকি ও মলা মাছ প্রতিকেজি ৬০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।