
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সময়সীমা যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই নানা ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান অভিযোগ তুলেছেন যে, ডাকসু নির্বাচনে কর্তৃপক্ষ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ধরে রাখতে পারছে না। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘণ করে প্রচারণা চালালেও কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। গুপ্ত সংগঠনগুলো বিভিন্ন হলভিত্তিল জোন তৈরি করে হলগুলোতে ডামি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
নির্বাচন চায়নি ছাত্রদল, ইশতেহার দেয় কীভাবে : সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ছাত্রদল কিন্তু ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে ছিল না। ভিসির সভাপতিত্বে যে মিটিং হয়েছে সেই মিটিংয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেছেন ডাকসু নির্বাচন চান না। আবার তারা শিক্ষার্থীদের ইশতেহার দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, শিক্ষার্থীদের এটাও ভাবা উচিত। ছাত্র অধিকারের ব্যানার ফেস্টুন প্রশাসন সরিয়ে ফেললেও, ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ফেস্টুন কিন্তু এখনও টিএসসিতে টানানো রয়েছে।
চিফ রিটার্নিং স্যারকে গতকাল কল দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম, ছাত্র সংগঠনের নামে ব্যানার ফেস্টুন করলে কি সেটা আচরণ বিধি লঙ্ঘনের মধ্যে না পড়ে , তাহলে আমাকে জানান আমিও ছাত্র অধিকার পরিষদের নামে দীর্ঘ ছয় বছরের ফ্যাসিবাদের দিনলিপি, হামালা, মামলা তুলে ধরে ব্যানার ফেস্টুন করব। স্যার গতকালই এটার ব্যাবস্থা নিতে চাইলেও আজও ছাত্রদল, গনতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ব্যানার ফেস্টুন এখনও টিএসসিতে আছে। তিনি আরও বলেন, অতীতেও আমরা দেখেছি কোন একটা আইন করা হলে, সেই আইন সবার ক্ষেত্রে একরকম এবং বিশেষ একটা দলের জন্য আরেকরকম। ঠিক এখনও বিশেষ প্রভাবের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাথা নত করছে বা একটা জায়গায় গিয়ে আর তাদের হাত কাজ করে না। এইভাবে হলে তো এই নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আরও বলেন, একজন নারী প্রার্থী সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থী হয়েও রাত ১:১৩ মিনিটের দিকে রোকেয়া হলে গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অপরদিকে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী লাইব্রেরির ভিতরে গিয়ে প্রচারণা করছেন আবার তাদের একজন প্রার্থী মিছিল নিয়ে শোডাউন করছে। এভাবে কি সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে? লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে চাইলে আইন নিয়ম কানুন সবার জন্য সমান করতে হবে। ছাত্রদলের উদ্দেশ্য এই ভিপি প্রার্থী বলেন, ডাকসুর যে প্যানেল দিবেন এই সিদ্ধান্তও লন্ডন থেকে দেওয়া হয়েছে নিজেরা নিতে পারেন নাই। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কিভাবে তারা সিদ্ধান্ত নিবেন।
ছাত্র শিবিরের প্যানেলের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিষয়ে বিন ইয়ামিন মোল্লা প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রতিকুল পরিস্থিতি আসলে আপনারা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা দিতে পারবেন কি না এটারও নিশ্চয়তা নেই। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে আপনারা তো শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান নাই বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ডাকসু নির্বাচন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার ২১ প্রার্থীর : ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল গতকাল। এই দিনে মোট ২১ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ২১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভোট ও প্রচারণা নিয়ে নির্দেশনা : ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের বহুদিনের বিতর্কের বিষয় পরিষ্কার করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোট দেওয়া, ভোটকেন্দ্র বৃদ্ধি, আনুষ্ঠানিক প্রচারণা ও উমামা ফাতেমার বিষয়ে আলোকপাত করেন তারা। জানা গেছে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রথম বর্ষের অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার পরে প্রাপ্ত ‘পে ইন স্লিপ’ দিয়ে ভোট দিতে পারবে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কার্ড, হল কার্ড ও লাইব্রেরি কার্ড তিনটির যেকোনো একটি কার্ড দেখিয়ে ভোট দিতে পারবেন। অনেক প্যানেলের প্রার্থী ভোটকেন্দ্র বৃদ্ধি করার কথা বললেও, ভোটকেন্দ্র বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই বলে জানা যায়। নির্বাচন প্রচারণা নিয়ে জানা যায়, আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে এবং নির্বাচনি আচরণবিধি নিয়ে বৈঠক করবে ডাকসু নির্বাচন কমিশন।
‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী উমামা ফাতেমার বিষয়ে জানা যায়, নিয়ম ভঙ্গ করে প্রচারণার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পায়নি নির্বাচন কমিশন।