
হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ফয়জাবাদ হিলসের পাহাড়ি এলাকায় লেবু গাছের নিচে নিচে আদা চাষ। প্রায় ১৫ একর জমিতে ১০ হাজার গাছে বারমাসি লেবু চাষ হচ্ছে। এরমধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ৫ একর জমির লেবু গাছের নিচে নিচে উন্নতজাতের আদা রোপণ করা হয়। তার বাকি প্রায় ৮৫ একর জমিতে অন্যান্য ফসল চাষ হচ্ছে। আদা রোপণের প্রায় এক মাস যেতেই চারা গজায়। বর্তমানে লেবু গাছের নিচে নিচে রোপণ করা আদার বাম্পার ফলন পেয়ে আনন্দিত চাষি কাজী কাউছার। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আদা উত্তোলন করে বিক্রি করা যাবে।
এখানে ধারণা করা হচ্ছে- প্রতিটা লেবু গাছের নিচ থেকে প্রায় এক থেকে দেড় কেজি আদা পাওয়া যাবে। এসব আদা প্রতিকেজি কমপক্ষে ১২০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এ হিসেবে ১ হাজার ৬০০ কেজি আদা থেকে ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা আসবে। এখানে আদা চাষে খরচ ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। আর ১০ হাজার লেবু গাছ থেকে বছরে ১৪ লাখ টাকার বিক্রি আসে। এখানে লেবু চাষে খরচ হয় ৭ লাখ টাকা।
উপজেলার চক্রামপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাসিন্দা চাষি কাজী কাউছার এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে। হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী। পাহাড়ি টিলায় চাষ করা কঠিন। শ্রমের মাধ্যমে কঠিনকে সহজ করলে সফলতা আসবে। এসব চিন্তা নিয়ে লেবুর সঙ্গে আদার চাষ শুরু করেছি। বিশেষ করে আদা চাষে নানাভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন বাহুবল উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম। গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে আদার বাম্পার ফলন হয়েছে। মো: শাহনেওয়াজ মিয়া বলেন, সময় পেলেই পাহাড়ে আসা হয়। এখানে লেবু গাছের নিচে নিচে আদার অধিক ফলন হয়েছে। আদা চাষ করে সফল খালাতো ভাই কাজী কাউছার। তার জন্য শুভ কামনা।
শ্রমিক সাধু মুন্ডা, উপেন তাঁতী ও রবি সাঁওতাল বলেন, চা বাগানে আমাদের কাজ নেই। ঘরে বেকার বসে থেকে লাভ কি। এগিয়ে যেতে হলে, টাকা রোজগারের প্রয়োজন। তাই লেবুর সঙ্গে আদা গাছেরও পরিচর্যা করে মজুরি পাচ্ছি। এ টাকায় পরিবারের অভাব ঘোচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, সবুজ পাহাড়ে লেবুর সঙ্গে আদাচাষ করে সফলতা পেয়েছেন চাষি কাজী কাউছার। তিনি মাঝেমধ্যে আমার কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেন। তার বাগানে লেবু গাছের নিচে নিচে আদার বাম্পার ফলন দেখে ভালো লেগেছে। তার সফলতা কামনা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় কর অপু বলেন, বাহুবলের পাহাড়ি এলাকায় অধিক পরিমাণে লেবু চাষ হয়। বর্তমানে সেখানে লেবু গাছের নিচে নিচে আদা চাষ শুরু হয়েছে। নিজের জমিতে আবাদ করে লেবুর সঙ্গে আদার ভালো ফলন পেয়েছেন চাষি কাজী কাউছার। সে তুলনায় তিনি দামও পাবেন।
তিনি বলেন, আদা হলো একটি ভেষজ উপাদান যার রয়েছে নানা গুণাগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা। এটি হজমে সাহায্য করে, বমি বমি ভাব কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এবং সর্দি-কাশি ও ব্যথার উপশম করে। এছাড়াও আদা ত্বক ও চুল সুস্থ রাখতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে। তাই জমি ফেলে না রেখে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে আদা চাষ করা প্রয়োজন।