
চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বাড়ানোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৭ অক্টোবর ঢাকায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ উন্নয়নে আলোচনা হবে বলে জানান অর্থ বিভাগ, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা সফরকালে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। জেইসি বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো, কৃষিতে সহায়তা, আর্থিক সেবা খাত, ব্যাংকিংসহ সংশ্লিষ্ট খাতে আলোচনা হতে পারে।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্র বলছে, পাকিস্তানের সঙ্গে ২০০৫ সালের পর আর কোনও জেইসি বৈঠক হয়নি। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ও সহযোগিতা স্বাভাবিক করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ইতোমধ্যে দেশটির চার জন মন্ত্রী ঢাকা সফর করেছেন। বিগত সরকারের সময়ে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি ছাড়া আর কোনও মন্ত্রী ঢাকা সফর করেননি। তবে সেই সফর দুটির কোনোটিই দ্বিপাক্ষিক ছিল না। তাই সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবারের জেইসি বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অপরদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের আমন্ত্রণে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ইসলামাবাদ সফরে যাচ্ছেন। আগামী ২৮ অক্টোবর তার পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তার সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
সম্পর্ক নতুন করে উজ্জীবিত করতে গত এপ্রিলে ঢাকা সফরে এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। এরপর গত আগস্টে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এবং বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ঢাকা সফর করেন। এছাড়া গত জুলাইয়ে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রাজা নকভি। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভায় যোগ দিতে ঢাকায় আসলেও তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০২৩ সালে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য পাকিস্তান বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ৬৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য পাকিস্তানে রফতানি হয়েছে। পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে তৈরি পোশাক খাতের কাপড়, সুতা ও সিমেন্ট। আর বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি আমদানি করে পাট এবং অন্যান্য টেক্সটাইল বাস্ট ফাইবার, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।
গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আমরা একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক চাই। সেই স্বাভাবিক সম্পর্কের মধ্যে সফর অন্তর্ভুক্ত। তারা যদি সফরে আসে, তাহলে আমরা স্বাগত জানাবো- এটাই স্বাভাবিক এবং আমরা তাই করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো চাই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ুক। যেটা আসলে অনেকটা একতরফা আটকে রাখা হয়েছিল এতদিন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের স্বার্থ আছে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় এবং তা এগিয়ে নেওয়াতে। আমার মনে হয় আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি।’