
দেশের মাটিতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের চায়নিজ সবজি। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে উচ্চমূল্যের এসব সবজির চাষ। চায়নার বিভিন্ন সবজির বাম্পার ফলনে ব্যাপক লাভের আশা করছেন উদ্যোক্তারা। ফলে উচ্চমূল্যের বিদেশি এই সবজি চাষে দেশের অর্থনীতিতে জেগে উঠবে নতুন আশার সম্ভাবনা। অপরদিকে দেশের মাটিতে বিদেশি সবজির মাঠে দেখতে ও জানতে আনাগোনা বাড়ছে চাষের আগ্রহী কৃষক ও দর্শনার্থীদের।
এলাকাবাসী, উদ্যোক্তা ও উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বছরখানেক আগে কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর বাগানবাড়ি এলাকায় প্লট আকারে বিক্রির লক্ষ্যে প্রায় ৬ বিঘা নিচু জমি ভরাট করেন ভূমি মালিকরা। পরে তারা সেখানে প্লট করে ছোট ছোট সীমানা প্রাচীর ও রাস্তা তৈরি করেন। কিন্তু চলতি বছর ওই জমি প্রায় দেড় লাখ টাকায় ভাড়া নিয়ে চাইনিজ সবজি চাষ শুরু করেন মানিক হোসেন এবং তার দুই চাচা খোয়াজ উদ্দিন ও নজিম উদ্দিন সুমন। তারা গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানার এনায়েতপুর এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে চাইনিজ সবজি চাষ করলেও কালিয়াকৈরে এবারই প্রথমবারের মতো উচ্চমূল্যের সবজি চাষ শুরু করেছেন ওই তিন উদ্যোক্তা। তারা লতিফপুর বাগানবাড়ি এলাকায় জমিভাড়া নিয়ে প্রথমে ছোট ছোট বীজতলা তৈরি করে সেখানে বীজ ছিটিয়ে দেন। এরপর বীজ থেকে চারা গজালে ওই প্রজেক্টের নির্দিষ্ট জায়গায় সেগুলো রোপণ করা হয়।
তাদের এ প্রজেক্টে চাষ হচ্ছে- চাইনিজ বাঁধাকপি, লেটুস পাতা, থাই আদা, পেঁয়াজ পাতা, লিক পাতা, লেটুস রোলসো, সুকাত পাতা, সুইট কর্ন, চাইনিজ পাতা, রেড ক্যাবেজ, বানচিং ওনিওন, জুকিনি, লেটুস আইসবার্গ, লাল ও সবুজ লেটুসসহ বিভিন্ন চাইনিজ সবজি। চায়নার বিভিন্ন সবজিতে ছেয়ে গেছে পুরো মাঠ। খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের চাইনিজ সবজির মাঠ পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও কৃষি অফিসের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা। আর চারা রোপণ শুরু থেকে দেড় মাসের মধ্যে চাইনিজ সবজি বিক্রির সময় হয়ে থাকে। এরপর একদিকে সবজি উঠিয়ে বিক্রি ও অপরদিকে চারা রোপণ করতে হবে। এভাবে উচ্চমূল্যের এসব সবজি বছরজুড়ে চাষ হলেও ফলন বেশি ভালো হয় শীতকালে। তাদের এ প্রজেক্টে আরো ৩/৪ জন লোক নিয়মিত কাজ করছেন।
চাইনিজ সবজি চাষে ওই তিন উদ্যোক্তাসহ ৬-৭ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তারা নিয়মিতি চাইনিজ সবজি তুলে ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুর, গুলশান, বনানী, সাভারের বিভিন্ন বাজারে ও রেস্টুরেন্টে বিক্রি করেন। এছাড়াও বিদেশি বায়ারদের খাবারের জন্য এখান থেকে সবজি বিভিন্ন শিল্প কারখানায়ও যায়। এর মধ্যে চাইনিজ পাতা ৮০ টাকা, ৯০ টাকা, লেটুস পাতা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, বানচিং ৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে তাদের এ প্রজেক্ট থেকে প্রায় প্রতিদিন ৪-৫ হাজার টাকার চাইনিজ সবজি বিক্রি করা হচ্ছে। এখানে চায়নার বিভিন্ন সবজির বাম্পর ফলনে এ প্রজেক্ট থেকে কয়েক লাখ টাকা লাভের আশা করছেন ওই তিন উদ্যোক্তা। এদিকে উচ্চমূল্যের বিদেশি এই সবজি চাষে দেশের অর্থনীতিতে জেগে উঠবে নতুন আশার সম্ভাবনা। অপরদিকে দেশের মাটিতে বিদেশি সবজির মাঠে দেখতে ও শিখতে আনাগোনা বাড়ছে চাষের আগ্রহী কৃষক ও দর্শনার্থীদের। শুধু ওই এলাকায়ই নয়, ওই তিন উদ্যোক্তা গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর দুই বিঘা জমিতে চাইনিজ সবজি চাষ করছেন।
শুধু তারাই নয়, আরও কয়েকজন চাইনিজ সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে স্থানীয়রা মনে করছেন, কাজের সুবাদে আমাদের দেশে বিপুল সংখ্যক চায়না মানুষ বাস করেন। ফলে চায়নিজ আইটেম সবজি চাষের বাজার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টেও চাইনিজ সবজির চাহিদা বাড়ছে। তাই পরিকল্পিত চাষাবাদ খুলতে পারে দেশের কৃষির নতুন সম্ভাবনার দুয়ার বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উদ্যোক্তা মোঃ মানিক হোসেন বলেন, এখানে ৬ বিঘা জমিভাড়া নিয়ে আমরা চাইনিজ সবজি চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে আমাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ করা হচ্ছে। আর চায়না যত খাবার প্রোডাক্ট আছে, ছালাত থেকে শুরু করে সবগুলো এখানে চাষ করছি। উচ্চমূল্যের এসব সবজি বছরজুড়ে চাষ হলেও ফলন বেশি ভালো হয় শীতকালে। এখানে প্রথম বছরেই বাম্পার ফলনে এখান থেকে আমাদের কয়েক লাখ টাকা লাভের আশা রয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহিদ হাসান জানান, এখানে চাইনিজ সবজি চাষের খবর পেয়ে আমরা পরিদর্শন করেছি। এখানে চাইনিজ সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের বিভিন্ন সহযোগিতা করা হবে।