
শীতের মিষ্টি রোদ আর কুয়াশার নরম চাদরে ঢাকা কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মেহার গ্রামের ফসলের মাঠ এখন হলুদ রঙের এক ক্যানভাস। মাঠজুড়ে সবুজের বুকচিরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সরিষার ফুলে যেন প্রকৃতি সেজেছে এক অপরূপ সাজে। এই হলুদ কার্পেটের মাঝে দাঁড়িয়ে যেন এক বুক স্বপ্নের হাতছানি দেখছেন কৃষক রুস্তম আলী। মাত্র ৩০ শতক জমিতে নাটোরের উন্নত জাতের সরিষার চাষ করে তিনি এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
রুস্তম আলী জানান, প্রতি বছরই তিনি এই বর্গা জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলান। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তিনি লক্ষ্য করেছেন, এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই ঝুঁকি না নিয়ে এবার নাটোরের উন্নত জাতের সরিষার বীজ সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন। বীজ রোপণ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যা করতে পারায় সরিষার গাছগুলো বেশ সতেজ ও স্বাস্থ্যবান হয়েছে। প্রতিটি গাছেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ফুল এসেছে এবং সরিষার দানা পুষ্ট হতে শুরু করেছে। কৃষকের চোখে এখন শুধু আনন্দের ঝিলিক।
তিনি বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষার চাষে ঝুঁকি কম, আর ফলন ভালো হলে লাভও বেশি। এবার যেভাবে গাছ হয়েছে আর দানা বাঁধছে, তাতে মনে হচ্ছে গত বছরের চেয়ে ফলন অনেক ভালো হবে। আশা করছি, এই ৩০ শতক জমি থেকে বিঘাপ্রতি যে পরিমাণ ফলন হওয়ার কথা, তার চেয়েও বেশি পাব। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারাও রুস্তম আলীর সরিষার খেত পরিদর্শন করেছেন। তাদের মতে, রুস্তম আলী সঠিক সময়ে, সঠিক জাতের বীজ ব্যবহার করেছেন এবং আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে চাষাবাদ করেছেন। এ কারণেই ফলন এতো ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘রুস্তম আলীর সরিষার বাম্পার ফলন অন্য কৃষকদেরও সরিষা চাষে উৎসাহিত করবে। তার এই সফলতা প্রমাণ করে যে, উন্নত জাতের বীজ এবং সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে স্থানীয়ভাবেও সরিষার ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। মেহার গ্রামের অন্যান্য কৃষকরাও রুস্তম আলীর সাফল্য দেখে মুগ্ধ। অনেকেই আগামী বছর থেকে সরিষার চাষ শুরু করার পরিকল্পনা করছেন। রুস্তম আলীর এই সফলতার গল্প শুধু একটি বাম্পার ফলনের পূর্বাভাস নয়, এটি স্থানীয় কৃষিতে নতুন দিগন্তের সূচনাও বটে। তার হাতে ফলানো এই স্বর্ণালি ফসল শুধু তার পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতাই নয়, এলাকার কৃষকদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবেও কাজ করবে। সরিষার তেলের চাহিদা বর্তমানে বাজারে অনেক। তাই এই বাম্পার ফলন রুস্তম আলীর মুখে হাসি ফোটাবে নিশ্চিতভাবেই। সরিষাকাটা ও মাড়াইয়ের দিনটির জন্য এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তিনি ও তার পরিবার।