
নিরাপত্তা জোরদার এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্তের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকাজুড়ে কাঁটাতার বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত সরকার। এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শত শত কিলোমিটার এলাকা এখনও কাঁটাতারবিহীন রয়েছে বলে সংসদে দেওয়া সরকারি তথ্যে উঠে এসেছে। এর পাশাপাশি পাকিস্তান সীমান্তের ৯৩ শতাংশ এলাকায়ও কাঁটাতার বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, নিরাপত্তা জোরদার ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্তের বড় অংশে কাঁটাতার বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমএইচএ)। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার লোকসভায় দেয়া এক লিখিত উত্তরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই একথা জানান।
তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্তের মোট ২ হাজার ২৮৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটারের মধ্যে ২ হাজার ১৩৫ দশমিক ১৩৬ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতার বসানো সম্পন্ন হয়েছে। যা মোট সীমান্তের ৯৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। বাকি ১৫৪ দশমিক ৫২৪ কিলোমিটার, অর্থাৎ ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এলাকায় এখনও কাঁটাতার বসানো হয়নি।
একইভাবে ৪ হাজার ৯৬ দশমিক ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের মধ্যে ৩ হাজার ২৩৯ দশমিক ৯২ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতার স্থাপন করা হয়েছে। এতে মোট সীমান্তের ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ এলাকা কাঁটাতারে কভার করা সম্ভব হয়েছে। এখনও ৮৫৬ দশমিক ৭৭৮ কিলোমিটার, অর্থাৎ ২০ দশমিক ৯২ শতাংশ সীমান্ত কাঁটাতারবিহীন রয়েছে। এছাড়াও সংসদে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তেও অগ্রগতির কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার। মোট ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্তের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯ দশমিক ২১৪ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতার বসানো হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, অনুপ্রবেশ রোধ ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সীমান্তে কাঁটাতার স্থাপন তাদের কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তৃণমূল কংগ্রেসের দুই সংসদ সদস্য জগদীশ চন্দ্র বার্মা বসুনিয়া ও শর্মিলা সরকার কাঁটাতারবিহীন সীমান্তের দৈর্ঘ্য ও শতকরা হার জানতে চাইলে ওই প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য তুলে ধরেন নিত্যানন্দ রাই।
এনডিটিভি বলছে, ভারতের মোট স্থলসীমান্তের দৈর্ঘ্য ১৫ হাজার ১০৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার এবং দ্বীপাঞ্চলসহ উপকূলরেখা রয়েছে ৭ হাজার ৫১৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার। সাতটি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের স্থলসীমান্ত রয়েছে। পশ্চিমে জম্মু ও কাশ্মির, পাঞ্জাব, রাজস্থান ও গুজরাট হয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে জম্মু ও কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া উত্তর ও উত্তর-পূর্বে লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশ হয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের সংবেদনশীল সীমান্ত রয়েছে।এই সীমান্ত পুরোটাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা দিয়ে চিহ্নিত। একই সঙ্গে উত্তরাখণ্ড, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে নেপালের সঙ্গে ভারতের উন্মুক্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণ সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত দিয়ে অবাধে চলাচল করে মানুষ।
পূর্বদিকে ভুটান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও অরুণাচল প্রদেশ হয়ে ভুটানের সঙ্গে ভারতের শান্তিপূর্ণ ও কৌশলগত সীমান্ত রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম ছুঁয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ স্থলসীমান্ত বিস্তৃত। আরও পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও মিজোরাম হয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে।
এছাড়া উত্তর-পশ্চিমে ওয়াখান করিডর দিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের একটি ছোট সীমান্তও রয়েছে। স্থলসীমান্তের পাশাপাশি পাল্ক প্রণালী দিয়ে শ্রীলঙ্কা এবং আরব সাগরে মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সামুদ্রিক সীমান্ত রয়েছে।