
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, মানুষকে ধোঁকা দিয়ে কাজ হবে না। আমরা আবারও ফ্যাসিবাদী দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হতে চাই না। তিনি বলেন, আমরা অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট— শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমাদের সামনে বিরাট একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদের দেশ ১৮ কোটি মানুষের ছোট্ট একটি দেশ। সম্ভবত বাংলাদেশ বিশ্বের এখন সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে যে বৃহত্তর ঢাকায় ৩ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ বসবাস করে। ২০৫০ সালে এই ঢাকা শহর হবে সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরে। তবে সেই শহরকে আমরা কিভাবে পরিচালনা করবো, সেটি ভাবার বিষয়।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে এখনও শক্তিশালী না হলেও, ইনফরমাল ইকোনমি দিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিবেন তাদেরকে এ সব বিষয়ে কাজ করতে হবে। যে কাজ মাত্র সাড়ে তিন বছরে করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশ সেবার পরিবর্তে, আত্মসেবা শুরু করেছিলো। তারা গণ মানুষের কল্যাণে রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে শুরু করেছিল অলিগার্কি। তারা মূলত সমাজের ধনী লোকদের দিয়ে অলিগার্কি কায়েম করেছিল। ফলে দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়েছেন।
ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ্যাড ড. মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার।
এই আলোচনা সভার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর মহাসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসেও আমরা গণতন্ত্র খুঁজে ফিরি। এই গণতন্ত্রের জন্যই তো একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো।
তিনি আরও বলেন, দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার, তথা মুক্তির জন্যই তো মানুষ যুদ্ধ করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, যারা অতীতে দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বর্তমানে দিচ্ছেন, তাদেরকে এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে যে তারা কেনো ব্যর্থ? আগামীতে যারা নেতৃত্ব দিবেন, তাদেরকে সেই প্রতিশ্রুতি বা আশার কথা বলবেন যে তারা ক্ষমতায় গেলে এ সবের সমাধান করবেন।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্য অবিরাম যুদ্ধ চলছে। মনে হয় যে এটা একটি চিরন্তন সংগ্রাম।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছে যে তারা সংস্কারের মাধ্যমে এই দেশকে একটি স্বাপ্নিক দেশে পরিণত করবে। তবে সংস্কার হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা থেমে থাকেনি। সংস্কারের মধ্য দিয়েই কিন্তু আমরা একবিংশ শতাব্দীতে এসে পৌঁছেছি।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, আমরা সারা বছর ধরে দিবসগুলো পালন করছি। কিন্তু এর অর্জন কী? ৫৪ বছরে আমাদের অর্জন কী?
ড. আব্দুল মঈন খান আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের চিন্তা ধারার পরিবর্তন আনতে হবে। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এ জন্য প্রথমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেটা না পারলে, এতো কিছু করে কী লাভ? মানুষের কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মানুষ না খেয়ে থাকতে পারে, কিন্তু কথা না বলে থাকতে পারে না।