
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। মাঠের পর মাঠ শুধু শসা, করলা আর ধুন্দুলের সমারোহ। এবার রবি মৌসুমে শসার বাম্পার ফলনে বদলে গেছে স্থানীয় কৃষকদের ভাগ্যের চাকা। কৃষি বিভাগের সময়োপযোগী প্রণোদনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কর্মকর্তাদের নিরলস তদারকিতে চান্দিনার ফসলি মাঠে এখন সবজির বিপ্লব ঘটেছে। চলতি মৌসুমে চান্দিনা উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বোরো সবজি প্রণোদনার আওতায় এক বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। উপজেলার ২০ জন কৃষককে একত্রিত করে ২০ বিঘা জমিতে ক্লাস্টার বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে শসা চাষের ব্যবস্থা করা হয়। কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও সঠিক দিকনির্দেশনায় এই ক্লাস্টার চাষাবাদে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। চান্দিনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুহাম্মদ মোরশেদ আলমের সুনিপুণ পরিকল্পনা ও পরামর্শে এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনক সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কৃষকরা সঠিক সময়ে বীজ, সার ও রোগবালাই দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পেরেছেন। উপজেলার দোবাড়িয়া মাঠে গিয়ে দেখা যায় সাফল্যের এক ভিন্ন চিত্র। সেখানে কৃষক আনোয়ার হোসেন মেম্বার ও ইমাম হোসেন রবি মৌসুমে বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছেন।
তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে শসা, ৭ হেক্টর জমিতে ধুন্দুল এবং ৫ হেক্টর জমিতে করলা চাষ করেছেন। মাচায় ঝুলছে থোকায় থোকায় শসা, যা দেখে পথচারীদেরও চোখ জুড়িয়ে যায়। কৃষকরা জানান, অতীতে শসা চাষে নানা ধরনের ছত্রাক ও পোকার আক্রমণে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কিন্তু এবার কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সুষম সার এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে গাছ হয়েছে সতেজ আর ফলন হয়েছে প্রচুর।
আর্থিক লাভের হিসেবেও এবারের মৌসুম কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকদের তথ্যমতে, প্রতি বিঘা জমিতে শসা চাষে বীজ, মাচা তৈরি, সার ও পরিচর্যা বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যার ফলে প্রতি সপ্তাহে একেকজন কৃষক জমি থেকে ২৫ থেকে ৩০ মণ শসা সংগ্রহ করছেন। বর্তমানে বাজারে শসার ব্যাপক চাহিদা থাকায় দামও পাওয়া যাচ্ছে বেশ ভালো। পাইকারি বাজারে প্রতি মণ শসা ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা আশা প্রকাশ করছেন, বর্তমান বাজার দর যদি স্থিতিশীল থাকে, তবে মৌসুম শেষে প্রতি বিঘা জমি থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার শসা বিক্রি করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ মাত্র কয়েক মাসের পরিশ্রমে উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় তিন থেকে চার গুণ বেশি মুনাফা অর্জনের স্বপ্ন দেখছেন তারা। চান্দিনা উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, কৃষকদের এই সাফল্য অন্য চাষিদেরও বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষে উৎসাহিত করছে। বিশেষ করে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় খরচ কমছে এবং রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ সহজ হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ আর কৃষকের কঠোর পরিশ্রমের এই মেলবন্ধন চান্দিনাকে এই অঞ্চলের সবজি উৎপাদনের মডেলে পরিণত করেছে। মাঠের এই সবুজ বিপ্লব শুধু কৃষকের আর্থিক সচ্ছলতাই আনছে না, বরং দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণেও রাখছে অনন্য অবদান।