সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের মেধাকে কাজে লাগাতে হবে।
তাদের প্রতিটি সম্ভাবনা, প্রতিটি কাজের মধ্যে দিয়ে জাগ্রত করতে হবে। গতকাল শুক্রবার আগারগাঁও জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। শারমীন এস মুরশিদ বলেন, দেশের বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর মৌলিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, তাদের উন্নয়ন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে এ দেশের মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তৃতা করেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসডিএসএল এর সদস্য মো. মামুনুর রশিদ ইফতি। অনুষ্ঠানে ঢাকা সরকারি বধির স্কুলের ১০ শ্রেণির ছাত্র শামীম, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী হিমু আক্তার উপযোগী কর্মমুখী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার দাবি জানান এবং তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ও বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রের কর্মকর্তা কর্মচারী, শিক্ষকমন্ডলী, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরা, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর দরিদ্রতা নিরসন ও জীবনমান উন্নয়নে নতুনভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী চিকিৎসা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে লক্ষ্যভিত্তিক পরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি। এখন পর্যন্ত এদেশে ৩৫ লক্ষাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে বাক-প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ১,৮১,৮৪৮ জন এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ১,১২,৬২৬ জন।
তিনি বলেন, বাচ্চাদের একটি সুন্দর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের জন্য সারা দেশের ৭টি সরকারি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সামাজিকভাবে অবহেলিত প্রতিবন্ধী মেয়েদের পুনর্বাসন ও স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য বর্তমানে সরকারিভাবে দেশের ৬টি বিভাগে ৬টি সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু রয়েছে। এ সব কেন্দ্রের মাধ্যমে সামাজিকভাবে নিগৃহীত বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়েদেরকেও সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় আনা হচ্ছে। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এদেশের বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী জনগণের জন্য চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা কার্যক্রম, অনুদান প্রদান, কর্মসংস্থান সহায়ক উপকরণ বিতরণ, প্রশিক্ষণ, আবাসন সুবিধা, উন্নয়ন মেলা ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে করে এদেশের প্রতিবন্ধী জনগণ নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেদেরকে উৎপাদনশীল কাজে সম্পৃক্ত করে আত্মনির্ভরশীলতার মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন করছেন।
প্রতিবন্ধী মানুষের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের জনগণ ও দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়াও বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সব আর্থসামাজিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। সবার সম্মিলিত কর্ম প্রয়াসে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্ষম হবো এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিন ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শহীদ এবং জুলাই আগস্ট ২৪ গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া হাজারো ছাত্র-জনতার বিদেহী আত্মার বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, বাংলা ইশারা ভাষা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘এক ভুবন এক ভাষা, চাই সার্বজনীন ইশারা ভাষা’ প্রতিপাদ্যটি এদেশের বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমঅধিকার নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দানকারী তরুন ছাত্র-জনতার স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দেশের দুস্থ, অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, দারিদ্র, এতিম প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতাসহ অনগ্রসর মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান জরিপ অনুসারে ৩৫ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫০ জন বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে, যার মধ্যে বর্তমানে ৩২ লাখ ৩৪ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সরকারি ভাতা ও ১ লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সম্মান ও উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে ‘সুবর্ণ নাগরিক’ আখ্যা দিয়ে সরকার কর্তৃক জরিপের মাধ্যমে এ দেশের প্রত্যেকটি প্রতিবন্ধী মানুষকে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কার্ড দেয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোতা ধারায় সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।