ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কমপ্লিট শাটডাউন সাত মেডিকেলে

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কমপ্লিট শাটডাউন সাত মেডিকেলে

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। দাবি আদায়ে তারা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধও করেন। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেছেন, এরই মধ্যে চিকিৎসকদের বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। তাই তাদের এই কর্মসূচি প্রত্যাহার করা উচিত। গত রোববার সকাল ৮টা থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

ইন্টার্ন চিকিৎসক কাউন্সিলের আহ্বানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল, বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন। এছাড়া গত রোববার ‘সাধারণ মেডিকেল শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলায় ভোগান্তিতে পড়েন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। আন্দোলনরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বলেছেন, ‘এমবিবিএস এবং বিডিএস ডিগ্রিধারীরাই হচ্ছেন প্রকৃত ডাক্তার। তারা নামের আগে ডাক্তার লাগাতে পারেন। কিন্তু এসএসসি পাস করে ম্যাটস এবং স্যাকমো যারা হাসপাতালে কর্মরত, তারা ডাক্তার নন, তারা মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট। অথচ নামের আগে ডাক্তার শব্দ ব্যবহার করে তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছেন।’

তারা বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলোর বিষয়ে অনেকবার জানানো হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা এ কর্মসূচি পালন করছি।’ তারা জানান, আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে মামলার শুনানি হবে। তাই তারা চান, রায়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে যে, এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন না। এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসক কাউন্সিলের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯০তম বারের মতো হাইকোর্ট রায় পেছানোর মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে নাট্যমঞ্চের রঙ্গশালায় পরিণত করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

অন্যদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায়) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দবির বিষয়ে বলেন, ‘প্রথম যে দাবি ডাক্তার লেখা নিয়ে, এটা দীর্ঘ ১০ বছর বিচারাধীন এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিচারাধীন বিষয়। এটার সমাধান আমাদের কারো হাতেই নেই। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে চিকিৎসা বন্ধ করাটা তাদের পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’ অন্য চারটি দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সেগুলো অগ্রগতি চলমান রয়েছে। কিছু অগ্রগতি দৃশ্যমান। সামনে আরও কিছু দৃশ্যমান হবে। অগ্রগতি সম্পর্কে ডাক্তারদের সক্রিয় সব পক্ষকে আমরা অবহিত করেছি। কিছু কিছু বিষয় আছে সময়সাপেক্ষ। তাও তাদের জানানো হয়েছে। তারা আমাদের সময়ও দিয়েছেন। এরই মধ্যে আপনার দেখেছেন, চিকিৎসকদের বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। তাই আমি মনে করি, তাদের এই কর্মসূচি প্রত্যাহার করা উচিত। কর্মসূচির আগে তারা সিনিয়রদের কাছে জানতে চাইলে জানতে পারতেন কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে।’

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি : এমবিবিএস/বিডিএস ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবেন না। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। বিএমডিসি নিবন্ধন শুধু এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রিধারীদের দিতে হবে। ২০১০ সাল থেকে হাসিনা সরকার ম্যাটসদের (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন দেয়া শুরু করেছে। এই ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন দেয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, উন্নত বিশ্বের চিকিৎসাব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওটিসি ড্রাগ লিস্ট আপডেট করতে হবে। এমবিবিএস বা বিডিএস ছাড়া অন্যরা ওটিসি লিস্টের বাইরের ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারবেন না। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিগুলো ওটিসি লিস্টের বাইরের কোনো ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না, স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের সংকট নিরসনে দ্রুত ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে সব শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। আলাদা স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করে আগের মতো সপ্তম গ্রেডে নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিবছর ৪-৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। চিকিৎসকদের বিসিএসে বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে হবে, সব মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট স্কুল (ম্যাটস) ও মানহীন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ করতে হবে। এরই মধ্যে পাস করা ম্যাটস শিক্ষার্থীদের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) পদ বাদ দিয়ে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে, চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত