দেশে সাড়ে ৬ কোটি মানুষ নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার বাইরে রয়েছে। যা মোট জ্বনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়া প্রতিদিন ঢাকায় প্রায় ২৩০ টন মানববর্জ্য উন্মুক্ত জ্বলাশয়ে গিয়ে পড়ে। যা পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
জ্বলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় স্যানিটেশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজ্বধানীতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল টয়লেট কনফারেন্স ২০২৫’ বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্বব্যাপী পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত এই কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারক, বেসরকারি খাতের অংশীদার ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি এবং উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। সম্মেলনে বক্তারা উল্লেখ করেন, নিরাপদ ও টেকসই পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব বাংলাদেশের লাখো মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। বিশেষ করে, শিশু ও প্রান্তিক জ্বনগোষ্ঠী এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনুন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশ আনুমানিক ৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা দেশের মোট জিডিপির ১.৫ শতাংশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। জ্বলবায়ু পরিবর্তন এবং চরম আবহাওয়াজ্বনিত দুর্যোগ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। আলোচকরা বলেন, ২০২৪ সালে ফেনীর ভয়াবহ বন্যার সময় হাজারো মানুষ নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।
জ্বরুরি অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ায় শিশু ও প্রান্তিক জ্বনগোষ্ঠী আবারও খোলা জায়গায় মলত্যাগে বাধ্য হয়। বন্যার ফলে পানির দূষণ ও সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘শিশুদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠার অধিকার রয়েছে, কিন্তু নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকলে তাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পথ সংকীর্ণ হয়ে যায়। সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ প্রচেষ্টায় টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জ্বরুরি।’ ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘শৌচাগার শুধু একটি প্রয়োজ্বন নয়, এটি স্বাস্থ্য, সম্মান ও উদ্ভাবনের প্রতীক। প্রতিটি শিশুর স্কুলে টিকে থাকার জ্বন্য একটি শৌচাগার প্রয়োজ্বন, প্রতিটি নারীর মর্যাদা রক্ষার জ্বন্য নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন দরকার, এবং আমাদের গ্রহকে রক্ষা করতে হলে প্রতিটি কমিউনিটিকে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সম্মেলন শুধু একটি আলোচনা নয়, বরং এটি আমাদের পুরোনো অভ্যাসকে চ্যালেঞ্জ্ব জানায় এবং উদ্ভাবনী সমাধান গ্রহণের আহ্বান জানায়।’