মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের চিকিৎসক পদবি সংক্রান্ত রিট দ্রুত নিষ্পত্তি, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) এবং ডিপ্লোমা অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ইন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে আরও ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। আজ্ব বুধবার থেকে তারা এ কর্মবিরতি পালন করবেন এবং কাল সকাল ১১টায় তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন। গতকাল মঙ্গলবার আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ডাক্তার পদবি ব্যবহার সংক্রান্ত রিটের রায়ের তারিখ ঘোষণা করেছেন আদালত। আগামী ১২ মার্চ এ রিটের রায় ঘোষণা করা হবে। আমরা আমাদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে একটি দাবির দিকে কিছুটা অগ্রসর হতে পেরেছি।
তবে যাত্রা এখানেই থেমে থাকবে না। বাকি দফাগুলো নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আগামীকাল দাবি আদায়ে বসব। আগামী ৪৮ ঘণ্টা সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এবং ইন্টার্নদের কর্মবিরতি চলমান থাকবে। নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে আরও বলা হয়েছে, আজ্ব সকাল ১১টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে সব চিকিৎসক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বা কার্যকরী পদক্ষেপ না দেখলে ৪৮ ঘণ্টা পর থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। জানা গেছে, গত পরশু থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
এরমধ্যে গতকাল কয়েকশ ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে হাইকোর্ট অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রায় অংশ নেন বেশ কয়েকজ্বন চিকিৎসকও। সাড়ে ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের ফটকে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। পরে আন্দোলনরত চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। কর্মবিরতি চলাকালে তারা ‘অ্যাকাডেমিক শাটডাউন’ পালন করবেন, অর্থাৎ এ সময়ে তারা কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। আন্দোলনকারীরা জানান, ২০১৩ সালে মেডিকেল সহকারীরা ডাক্তার উপাধি ব্যবহারের অধিকার চেয়ে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন। তাদের অভিযোগ, ১১ বছর ধরে মামলাটি বিচারাধীন থাকায় আইনি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মেডিকেল সহকারীরা অবৈধভাবে এই উপাধি ব্যবহার করছেন।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি হলো : এমবিবিএস/বিডিএস ব্যতীত কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না- বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) এ আইনের বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে ও বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন শুধু এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রিধারীদের দিতে হবে। ২০১০ সালে হাসিনা সরকার ডিপ্লোমা অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ইন মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং কোর্স-ম্যাটসদেরকে বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া শুরু করেছে, এই ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে;
চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওভার-দ্য-কাউন্টার (ওটিসি) তালিকা নবায়ন করতে হবে। এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া অন্য কেউ ওটিসি তালিকার বাইরে ওষুধ প্রেসক্রিপশন করতে পারবে না। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিগুলো ওটিসি তালিকার বাইরে কোনো ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না; স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের সংকট নিরসনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
যেমন- ক. দ্রুত ১০,০০০ জ্বন ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে সকল শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। আলাদা স্বাস্থ্য কমিশন গঠনের আগের মতো সপ্তম গ্রেডে নিয়োগ দিতে হবে। খ. প্রতিবছর ৪,০০০-৫,০০০ ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। গ. ডাক্তারদের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে হবে; ম্যাটস ও মানহীন সরকারি ও বেসরকারি কলেজ্বগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। এরইমধ্যে পাস করা ম্যাটস শিক্ষার্থীদের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) পদবি রহিত করে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে; চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দাবিগুলো বাস্তবায়নে দেশের বেশ কিছু মেডিকেল কলেজে আন্দোলন চলমান রয়েছে। তবে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে তাদের করা দাবিগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।