ঢাকা শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গুমে ক্ষতিগ্রস্ত ও জুলাই যোদ্ধাদের মানসিক স্বাস্থ্য পুনর্বাসনের তাগিদ

গুমে ক্ষতিগ্রস্ত ও জুলাই যোদ্ধাদের মানসিক স্বাস্থ্য পুনর্বাসনের তাগিদ

কমিটি ফর অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সিএডিএফ) ও যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ ফর সাইকিয়াট্রিস্টস এর উদ্যোগে আয়োজিত একটি কর্মশালায় বক্তারা গুমের শিকার ব্যক্তি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে সরকারি, বেসরকারি ও পারিবারিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ওপর গুরত্বারোপ করেছেন। গতকাল শুক্রবার ঢাকার পর্যটন ভবনে আকিজ বেকার্সের পৃষ্ঠপোষকতায় এ কর্মশালা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সরকারি প্রতিনিধি, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, জুলাই যোদ্ধা, ছাত্র ও তরুণ প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ২০০ জন দেশি-বিদেশি অতিথি।

বক্তারা বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিরা মানসিক ও সামাজিক চাপের কারণে নিজেরা চিকিৎসা নিতে আসেন না। তাই তাদের পরিবারের কাছেই সরাসরি ও প্রযুক্তিনির্ভর চিকিৎসা পৌঁছাতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় পুলিশ কাস্টডিতে থাকা আহতদের ন্যূনতম চিকিৎসা দেয়া হয় নাই। আবার গুমের শিকার ব্যক্তি এবং জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসা প্রদানে ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুগত চিকিৎসকরা অপারগতা প্রকাশ করেছিল। তারা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার জমি-জমা ভাগ কিংবা টাকা উত্তোলন করা করতে পারেন না। কারণ, নিখোঁজ ব্যক্তি জীবিত কি না মৃত তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য ডা. নাবিলা ইদ্রিস বলেন, গুমের প্রকৃত চিত্র এখনো উঠে আসেনি। গুমের শিকার মানুষেরা এখনও ট্রমার শিকার। তারা সাহস করে তাদের গুমের কথা বলতে পারছেন না। রয়েল কলেজ অব সাইকিয়াট্রির চেয়ারম্যান ডা. আনিস আহমেদ বলেন, রাষ্ট্র যখন নিপীড়ন করে তখন তার প্রভাব শুধু ব্যক্তির ওপরও সীমাবদ্ধ থাকে না। তার পরিবার ও তার আশেপাশের মানুষের ওপর প্রভাব পরে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে শিশুরা নানা ধরনের ট্রমায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের চিকিৎসায় আর্ট থেরাপি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জালাল উদ্দিন বলেন, গুমের শিকার ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিরা যেন তাদের পরিবার ও সমাজে বোঝা না হয়ে উঠে তার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সাহস যোগাতে হবে এবং মানসিক ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। কর্মশালায় গুম হতে বেঁচে ফিরে আসা মাইকেল চাকমা, লেফট্যানেন্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমান তাদের গুমের অশ্রুসিক্ত ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তারা বলেন, ‘গুমের শিকার ব্যক্তির জন্য পরিবারের মা, বাবা, স্ত্রী ও সন্তানের অপেক্ষার যন্ত্রণা অপরিসীম। অনিশ্চিত জীবন-যাপনে পরিবারের সম্পর্কগুলো চরম মানসিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হয়েছে। স্রষ্টার ওপর বিশ্বাস ও ধর্মীয় চর্চা গুমের শিকার ব্যক্তিকে আয়নাঘরে বেঁচে থাকার আশা জুগিয়েছিল।’ ‘গুম থেকে ফিরে এসে পরিবারের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অন্যতম চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে গুমের শিকার ব্যক্তির স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে পুনঃসম্পর্ক স্থাপন ও পারিবারিক বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন।

গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবার এখনও ভয় এবং শঙ্কার মধ্যে বাস করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত