নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা। গতকাল রোববার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে সংস্কার বিষয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এই দাবি জানান সামিনা লুৎফা। রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীরা একটি অসাধারণ সময় ও সুযোগ পার করছেন বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। তিনি বলেন, প্রতিটি আন্দোলনে নারীরা সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছেন। এই ভূমিকার পর আন্দোলন শেষে তারা আবার ঘরে ফেরত গেছেন গৃহস্থালির কাজে। কিন্তু এবারই দেখা গেছে, তরুণ প্রজন্মের নারীরা প্রবল আগ্রহ ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজনীতিতে আসতে চাইছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে এই বার্তা দেওয়া প্রয়োজন, নারীরা রাজনীতিতে আসতে চাইছেন, তাদের সে সুযোগটা করে দিতে হবে। এ কারণে তারা দাবি করছেন, নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আবর নির্বাচনপদ্ধতিতে নারীদের অংশগ্রহণে আগ্রহী করার প্রক্রিয়া থাকতে হবে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রসঙ্গ টেনে সামিনা লুৎফা বলেন, কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে প্রচুর তর্কবিতর্ক ও আলোচনা হয়েছে। আলোচনাটা খুব জরুরি। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনসহ অন্যান্য কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে এই আলোচনা চালু থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সামিনা লুৎফা বলেন, অতীতে দেখা গেছে, রাজনীতিতে বারবার স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা চলে আসে। এই প্রবণতা ঠেকানোর জন্য ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোয় বলা হয়েছে। নাগরিক হিসেবে তার চাওয়া, কমিশন এই বিষয়গুলোর ওপর জোর দিক। যাঁরা সংসদে থাকবেন, যাঁরা নীতি নির্ধারণ করবেন, তাদের যেন একটা জবাবদিহির মধ্যে নিয়ে আসা যায়। সংস্কারের অনেক বিষয়ে অনেকের মত-দ্বিমত থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেন সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন, তবে একজন নাগরিক হিসেবে বেশ কিছু বিষয়ে তিনি নিশ্চয়তা চান। নাগরিকের অধিকার, কথা বলার অধিকার, মানবাধিকার, নারীর অধিকার, ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তা ও প্রান্তিক মানুষের মৌলিক অধিকারের জায়গাগুলোয় সবাইকে একমত হতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল যদি এসব বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে, তাহলে ঐকমত্য কমিশন যেন বিষয়গুলো তাদের বোঝায়। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় সুশীল সমাজের ১১ প্রতিনিধি অংশ নেন। তারা হলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ও ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক একেএম ওয়ারেসুল করিম, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মির্জা এম হাসান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিরা দেওয়ান, নারী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুন নাহার মিষ্টি, বাংলাদেশ পূজা উদ্?যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা রাজিয়া।