ষোলো দিনের মতো বন্ধ দেশের একমাত্র জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইও)। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ ছাড়া বাকি সব বিভাগ বন্ধ রয়েছে। টানা এক সপ্তাহ শাটডাউন শেষে গেলো এক সপ্তাহ থেকে স্বল্প পরিসরে চালু করা হয় জরুরি সেবা। গতকাল বুধবার হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম এমন তথ্য দিয়েছেন। গত ২৮ মে থেকে হাসপাতালটির পুরো চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ। এক সপ্তাহ পর স্বল্প পরিসরে জরুরি বিভাগ চালু হলেও এখন পর্যন্ত বাকি বিভাগগুলো চালু হয়নি।
ডা. জানে আলম বলেন, এখন পর্যন্ত জরুরি বিভাগের ২৫ জন সেবা নিয়েছেন। জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে আটজনের। তবে অন্যান্য সেবা বন্ধ আছে। জুলাই আহতদের ভেতরে ২/৩ জন অবস্থান করছেন। তারা নিজেরাই ভেতর থেকে তালা দিয়ে ওয়ার্ডে থাকছেন, চিকিৎসা দেওয়া বা তাদের কাছে গিয়ে খোঁজ নেওয়ারও সুযোগ নেই। কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে গত ২৮ মে কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জরুরি বিভাগ ছাড়া নিয়মিত অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে সব চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। যে কারণে সকাল থেকেই হাসপাতালে আসা সাধারণ রোগী ও সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। বেলা সাড়ে ১১টার পর চিকিৎসক ও রেজিস্ট্রার মাহফুজ আলম বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। যাদের পূর্বনির্ধারিত অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল, তাদের পরে ফোনে ডেকে এনে অস্ত্রোপচার করে দেবেন বলে জানান। এতেও সেবাপ্রার্থীরা নিবৃত হননি। তারা হইহুল্লোড় ও হট্টগোল করতে থাকেন। চিকিৎসক ও নার্সদের দিকে তেড়ে যান। এ সময় আনসার সদস্যরা নিবৃত করতে গেলে হাতাহাতি হয়। হাসপাতালের কর্মী ও সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে মারামারিও হয়। এরপর পুরো হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ভেতরের সব ওয়ার্ডের কলাপসিবল গেট আটকে তালা দিয়ে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা।
বিষয়টি নিজেদের জন্য আতঙ্কের বা আক্রমণাত্মক হতে পারে এমন আশঙ্কায় উল্টো তালা ভেঙে জুলাই আহতরা লাঠি-সোঁটা ও রড হাতে চিকিৎসক, কর্মী ও সেবাপ্রার্থীদের এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করেন। তাদের সঙ্গে এসে সেই হামলায় যোগ দেন পঙ্গু হাসপাতালে থাকা জুলাই আহতরাও।
এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ ১৫ জন আহত হন। এরপর আতঙ্কে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের বেশিরভাগ দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে যান। তাদের কেউ কেউ ভেতরে আটকা পড়লে সেনাসদস্যরা গিয়ে উদ্ধার করেন। এরপরই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। কার্যত ওইদিন থেকে পুরো হাসপাতাল জুলাই আহতদের দখলে চলে যায়। এরপর থেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন না চিকিৎসক-নার্সসহ অন্য কর্মীরা। সেখানে এখন শুধু জুলাই আহতরা অবস্থান করছেন। সরকার রুটিনমাফিক তাদের জন্য খাবার সরবরাহ করছে।