ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইসলামে অঙ্গীকার পূরণের গুরুত্ব

ইসলামে অঙ্গীকার পূরণের গুরুত্ব

আরবি শব্দ ‘আহদুন’ বা ‘ওয়া’দুন’। যার বাংলা অর্থ অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি, চুক্তি, শপথ ইত্যাদি। সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যে পরস্পরের সঙ্গে যে লিখিত বা মৌখিক চুক্তি করা হয়, তাই অঙ্গীকার। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে মানুষের মর্যাদা সর্বাধিক। আমাদের রুহ সৃষ্টির পরে আল্লাহ আমাদের থেকে তাঁকে রব হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। পক্ষান্তরে তিনিও বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের সঙ্গে অঙ্গীকার করেছেন। পবিত্র কোরআনের একাধিক জায়গায় আল্লাহ তাঁর ওয়াদার কথা উল্লেখ করেছেন। যেমনÑ যদি তোমরা (নিয়ামতের) কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদের (নিয়ামত) আরও বাড়িয়ে দেব। (সুরা ইবরাহিম : ৭)।

ইসলামে অঙ্গীকার পূরণের গুরুত্ব

অঙ্গীকার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে : প্রতিজ্ঞা পালন করা মানুষের ভালো শিষ্টাচারগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। মানব জীবনে এটি পূরণ করার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটি ব্যক্তিই তার কর্তব্যের বিষয়ে আল্লাহর কাছে দায়বদ্ধ। হাশরের ময়দানে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে মহান রবের সামনে সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। এরশাদ হয়েছেÑ ‘তোমরা অঙ্গীকারগুলো পালন কর। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সুরা বনি-ইসরাইল : ৩৪)।

অঙ্গীকার পালন করা মোমিনের বৈশিষ্ট্য : মোমিনদের জন্য সৎকাজের যতগুলো তালিকা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করেছেন, তন্মধ্যে অঙ্গীকার পূরণ অন্যতম একটি। কারণ অঙ্গীকার ভঙ্গ হলে মানুষ তার সকল নৈতিক দিক থেকে দূরে সরে যায় এবং পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী এমনকি রাষ্ট্রের সবার মধ্যেই দূরত্ব ও বৈরিতা তৈরি হয়। সৎকর্মের বর্ণনায় আল্লাহ বলেনÑ ‘... যখন তারা (মোমিনরা) প্রতিজ্ঞা করে তখন তারা তাদের কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদন করে।’ (আল-বাকারা : ১৭৭)।

অঙ্গীকার ভঙ্গ করা মোনাফেকের আলামত : রুহের জগতে থাকাকালীন আমরা আল্লাহর সঙ্গে এই মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছি যে, আমরা রব হিসেবে শুধু তাঁকেই গ্রহণ করব। তাই সব ক্ষেত্রে তাঁকে ভয় করে জীবনযাপন করতে হবে। দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে আমরা কোন ফন্দি করে যদি আল্লাহর সঙ্গে কিংবা কোনো ব্যক্তিকে দেওয়া অঙ্গীকার ভঙ্গ করে থাকি তবে আমরা মোনাফেক হিসেবে গণ্য হব। কারণ, রাসুল (সা.) এর বাণীতে মোনাফেকের যে তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা বর্ণিত হয়েছে তন্মধ্যে ওয়াদা ভঙ্গকারী একজন। ‘রাসুল (সা.) বলেছেনÑ মোনাফেকের আলামত তিনটিÑ ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে আর ৩. যখন তার কাছে আমানাত রাখা হয় তা খেয়ানত করে।’ (বোখারি : ৩৩)।

অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর প্রাপ্তিশূন্য পরকাল : দুনিয়ায় সামান্য স্বার্থের জন্য আমরা হরহামেশা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে চলি। ক্ষমতাবান ব্যক্তি অধীনদের সঙ্গে কিংবা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে তার প্রাপ্য সম্পদ, সম্মান ও সম্ভ্রম নিয়ে অবলীলায় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এটাই যেন ক্ষমতার দাপট প্রমাণের মাধ্যম। অথচ আমরা ভুলে যাই যে, দুনিয়ার সামান্য এ স্বার্থের তুলনায় পরকালীন সুখ অনেক উত্তম। পবিত্র কালামের বাণীÑ ‘যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মূল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই।’ (সুরা আল-ইমরান : ৭৭)।

আলোচ্য বিষয়ের সারকথা হলো, যে প্রতিশ্রুতি পালন করা যাবে না সেসব মিথ্যা প্রতিশ্রুতি থেকে এবং কথায় কথায় অঙ্গীকার করার প্রবণতা থেকে নিজেকে এবং আমাদের সন্তানদের রক্ষা করতে হবে। আর সত্য সঠিক পুণ্যের কাজে কৃত ওয়াদা পালনে সচেষ্ট হতে হবে।

লেখক : পিএইচডি গবেষক, আরবি বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত