ঢাকা মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এনবিআরের ঘাটতি ৯৩ হাজার কোটি টাকা

এনবিআরের ঘাটতি ৯৩ হাজার কোটি টাকা

বিদায়ী অর্থবছরে শুল্ক-কর আদায়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তাদের লক্ষ্যের কাছাকাছিও যেতে পারেনি। এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুল্ক-কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা, যা এযাবতকালের রেকর্ড। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত হলো রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। আইএমএফের এমন শর্তের মুখে এত বিশাল ঘাটতিতে পড়ল এনবিআর। বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কারণে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় অচল ছিল। আবার বছরের শেষ মাস জুনে এনবিআরের আন্দোলনের কারণে বড় ধরনের ঘাটতির মুখে পড়েছে দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটি। বিদায়ী অর্থবছরে সব মিলিয়ে এনবিআরের শুল্ক, ভ্যাট ও কর বিভাগ আদায় করেছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আয়করে বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৪২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে।

যে কারণে ঘাটতি : গত অর্থবছরে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় না হওয়ার প্রধান দুটি কারণ হলো জুলাই আন্দোলন এবং এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন। এই দুটি নতুন কারণ। এ ছাড়া এনবিআরে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া; কর জাল বৃদ্ধি না পাওয়া, কর কর্মকর্তাদের সক্ষমতার অভাব, শুল্ক-কর ফাঁকি, পর্যাপ্ত অটোমেশন না হওয়া এসব পুরোনো কারণ তো আছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে করদাতাদের হয়রানি এবং ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগও আছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। অফিস আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায়নি। এ ছাড়া আন্দোলনের সময় বেশ কয়েক দিন কারফিউ ছিল। এসব কারণে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হয়নি। এ ছাড়া বছরজুড়ে একধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতাও ছিল। এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা, যা ওই দুই মাসের লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কম। আবার আগের অর্থবছরের জুলাই-আগস্টের চেয়েও সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছিল। এরপর সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির আন্দোলন, দাবিদাওয়া, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপসহ নানা ঘটনায় বছরজুড়েই ব্যবসা-বাণিজ্য শ্লথগতি হয়। বছরের শেষ দিকে এসে যুক্ত হয় এনবিআরের সংস্কার নিয়ে আন্দোলন। জুন জুড়েই আন্দোলন চলে। এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি ও কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচি পালন করেন। চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোলসহ দেশের প্রধান কাস্টম হাউসে কাজ বন্ধ থাকে। সাধারণত জুনে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়। জুনে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার কোটি টাকার মতো শুল্ক-কর আদায় হয়, কিন্তু এবার তা হয়নি। এনবিআরের হিসাব অনুসারে, জুন মাসে শুল্ক-কর আদায়ে লক্ষ্য ছিল ৬৯ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৩ হাজার ৯১ কোটি টাকা। শুধু জুনেই ঘাটতি প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। জুনের এই ঘাটতি এনবিআরের পুরো বছরের ঘাটতিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে বাঁচল এনবিআর : হিসাব মহানিয়ন্ত্রক বা সিজিএর সঙ্গে এনবিআরের হিসাবের গরমিল ঠিক করায় এবার নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে বেঁচে গেছে এনবিআর। যখন এনবিআর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুল্ক-কর আদায়ের হিসাব দিয়েছিল, তখন বলা হয়েছিল এনবিআর আদায় করেছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে হিসাব মহানিয়ন্ত্রক সিজিএর হিসাবে, কোষাগারে জমা হয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পার্থক্য প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। এরপর এনবিআর কর্মকর্তা ও সিজিএ কর্মকর্তারা বৈঠক করে রাজস্ব আদায়ের হিসাবের এই পার্থক্য ঠিক করেন। সিজিএর হিসাব মেনে নেয় এনবিআর। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে এনবিআর আগের অর্থবছরের হিসাবও দেখানো হয়। সেই তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা শুল্ক-কর আদায় হয়।

এর ফলে বিদায়ী অর্থবছরের যত টাকা শুল্ক-কর আদায়ে তাতে আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি বা প্রবৃদ্ধি হয়। যদি এনবিআরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পুরোনো হিসাবটি আমলে নেওয়া হতো, তাহলে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে যেত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এনবিআর রাজস্ব আদায়ের হিসাব করত সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের (জুলাই মাস থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত) বিপরীতে কত অর্থ আদায় করা হয়েছে। যদি জুলাই মাসেও আগের অর্থবছরের কোনো অর্থ জমা পড়ে, তা-ও আগের অর্থবছরের রাজস্ব আদায় হিসেবে দেখানো হতো। অন্যদিকে হিসাব মহানিয়ন্ত্রক সিজিএর হিসাব করে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস হিসাব থেকে। ৩০ জুন পর্যন্ত যত অর্থ জমা পড়ে, তাই দেখাবে সিজিএর হিসাবে। এ ছাড়া আইবাস সিস্টেমে অনেক মন্ত্রণালয় যুক্ত হয়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত