ঢাকা শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ নতুন করে যাচাই হবে

২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ নতুন করে যাচাই হবে

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ নতুন করে যাচাই করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘এসব ঋণের বিপরীতে যথাযথ জামানত আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হবে। অনিয়ম পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা ও পরিচালনা পর্ষদকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্ম : চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত সংস্কারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর স্বাধীনতা প্রয়োজন। এ জন্য আন্তর্জাতিক মানের আইন প্রণয়নের প্রস্তাব সরকারকে দেওয়া হয়েছে। এই আইন পাস হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন সহজ হবে।’

পাঁচ ব্যাংক একীভূত, ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়ন : ব্যাংক খাত পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে দুর্বল পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া দ্রুত এগোচ্ছে জানিয়ে ড. মনসুর বলেন, ‘আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই এসব ব্যাংকের নাম ও সাইনবোর্ড পরিবর্তনের কাজ শুরু হবে।’ তিনি জানান, একীভূতকরণের ফলে শাখা পর্যায়ে পুনর্বিন্যাস আসবে। একই এলাকায় একাধিক শাখা থাকলে খরচ কমাতে একটি রেখে বাকিগুলো অন্য স্থানে স্থানান্তর করা হবে। এ ছাড়া ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান গভর্নর। তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানের সব সাধারণ আমানতকারী পুরো টাকা ফেরত পাবেন, আর প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীরা আংশিক অর্থ ফেরত পাবেন।’

আমানতকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান : আমানতকারীদের দুশ্চিন্তা দূর করতে গভর্নর বলেন, ‘গ্রাহকেরা চাইলে দ্রুততম সময়ে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত ফেরত পাবেন। এ লক্ষে একীভূত পাঁচ ব্যাংকের জন্য এরইমধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সবাই একযোগে টাকা তুলতে গেলে বিশ্বের কোনো শক্তিশালী ব্যাংকও চাপ সামলাতে পারবে না। প্রয়োজন না হলে আমানত ব্যাংকেই রাখুন।’

খেলাপি ঋণ ৩৬ শতাংশ, ফরেনসিক অডিট হবে : ব্যাংকিং খাতে প্রকৃত খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে স্বীকার করেন গভর্নর। এই সংকট মোকাবিলায় বড় ঋণে অনিয়ম খুঁজে বের করতে ফরেনসিক অডিট করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

ড. মনসুর বলেন, ‘ব্যাংক কোনো মালিকের ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। অপরাধ করলে কেউই ছাড় পাবে না। কোনো শাখা থেকে অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ পাশাপাশি দুর্নীতির তথ্য দেওয়া হুইসেল ব্লোয়ারদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন গভর্নর।

বন্ড মার্কেটের ওপর জোর : খেলাপি ঋণের চাপ কমাতে ব্যাংকনির্ভরতা হ্রাস করে বন্ড মার্কেটের বিকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে বন্ড মার্কেটের আকার যেখানে ১৩০ ট্রিলিয়ন ডলার, সেখানে ব্যাংকিং খাতের আকার ৬০ ট্রিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশেও বড় শিল্প ঋণের জন্য বন্ড মার্কেট চালুর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’

নির্বাচন ও অর্থনীতি : নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না উল্লেখ করে ড. মনসুর বলেন, ‘দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্ট পরিস্থিতি শক্তিশালী হচ্ছে।’

সিপিডির আহ্বান : একই অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন ব্যাংকিং খাত সংস্কারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে ব্যাংকিং খাতকে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে- ব্যাংকিং খাত আগের মতো ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর হাতে থাকবে, নাকি জনগণের কল্যাণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে ব্যবহৃত হবে।’

চলতি অর্থবছরেই রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারে নেওয়ার লক্ষ্য : চলতি অর্থবছরের মধ্যেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪ থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে নতুন করে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

ব্যাংক ভালোভাবে না চললে হস্তক্ষেপ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক : কোনো ব্যাংক ভালোভাবে না চললে সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে বলে মন্তব্য করেছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন (ইআরএফ) আয়োজিত ব্যাংক খাতবিষয়ক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।

ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরাতে আংশিকভাবে সফল হয়েছি : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আমাদের একটি চ্যালেঞ্জ ছিল যে ব্যাংক খাতের ওপর এক ধরনের আস্থা ধরে রাখা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত