প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ৩১ জুলাই, ২০২৫
মাতা-পিতা ও সন্তানের মধ্যকার হৃদ্যতা পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম ও স্থায়ী সম্পর্ক। কোরআনের বহু আয়াতে আল্লাহতায়ালা নিজের হকের পাশাপাশি মাতা-পিতার অধিকারের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করবে না। আর মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৩)। পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার অর্থ হলো, তাদের অধিকার আদায় করা। আল্লাহর হক আদায় না করলে যেমন নাজাত পাওয়া যাবে না, পিতা-মাতার হক আদায় না করলেও মুক্তি মিলবে না। আল্লাহর হক আদায় না করলে যেমন আল্লাহ নারাজ হবেন, পিতা-মাতার হক আদায় না করলেও তেমন অসন্তুষ্ট হবেন।
পিতা-মাতার খুশিতে আল্লাহ খুশি : প্রতিটি সন্তানের জন্য পিতা-মাতা এক অমূল্য সম্পদ। তাদের ভালোবাসা নির্ভেজাল, অকৃত্রিম। মাতা-পিতাহারা সন্তানই বুঝতে পারে, মাতা-পিতার প্রকৃত মূল্য। বারবার অন্তরের গহিন কোণে ভেসে ওঠে- আহ, একটিবার যদি মাকে মা বলে, বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারতাম! যদি তাদের স্নেহ-মমতার একটু পরশ পেতাম! তাই তো তারা বেঁচে থাকতে তাদের যথাযথ কদর করা সৌভাগ্যের লক্ষণ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পিতার সন্তুষ্টিতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি, পিতার অসন্তুষ্টিতেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’ (তিরমিজি : ১৮৯৯)।
মাতা-পিতার খেদমত জরুরি : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক কোরো না। আর পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা নিসা : ৩৬)। তাই আল্লাহর হক আদায় করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, পিতা-মাতার হক আদায় করাও তেমন গুরুত্বপূর্ণ। একবার রাসুল (সা.) বললেন, ‘সে ব্যক্তির নাক ধুলোয় ধুসরিত হোক।’ কথাটি তিনবার বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কার হে আল্লাহর রাসুল?’ তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে বা তাদের একজনকে বার্ধক্যজনিত অবস্থায় পেল, এরপরও সে তাদের খেদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।’ (মুসলিম : ১০)।
পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞতার নির্দেশ : এ বিশ্বচরাচরে আসার মাধ্যম হলেন মাতা-পিতা। গর্ভে ধারণ করে মা অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। সংসার পরিচালনায় বাবা অনেক শ্রম দিয়েছেন। তাই আল্লাহ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মানুষকে পিতা-মাতার ব্যাপারে জোর নির্দেশ দিয়েছি, তার মা তাকে বহু কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। আমার ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। আমার কাছেই সবাইকে ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা লোকমান : ১৪)।
ধমক দিয়ে কথা বলা যাবে না : পিতা-মাতা উভয়কে বা একজনকে যদি বৃদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়, তাহলে তাদের খুব খেদমত করা চাই। কোনোভাবে তাদের কষ্ট দেওয়া যাবে না। একটা কথা দ্বারাও কষ্ট দেওয়া সমীচীন নয়। অনেক সময় দেখা যায়, মাতা-পিতা বার্ধক্যে উপনীত হলে এক কথা বারবার বলতে থাকেন। এতে সন্তান বিরক্ত হয়ে বলে- উফ, কী যন্ত্রণায় পড়লাম! কী প্যাচাল শুরু করল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তোমার বর্তমানে তাদের একজন বা উভয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে, তাহলে তুমি তাদের উফ পর্যন্ত বলবে না। তাদের ধমক দেবে না। তাদের সঙ্গে নম্রভাবে সম্মান রক্ষা করে কথা বলবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৩)।
পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ নবীদের গুণ : নবীরা সব সময় মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতেন। ইবরাহিম (আ.) যখন তার পিতাকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে বললেন, ‘বাবা! আপনি কেন এমন রবের উপাসনা করেন, যে শোনে না ও দেখে না। আপনার বিপদে কোনো কাজে আসবে না। আমার কাছে যে জ্ঞান এসেছে, তা আপনার কাছে আসেনি। সুতরাং আপনি একত্ববাদকে গ্রহণ করুন। সরল সহজ পথ পেয়ে যাবেন।’ (সুরা মারইয়াম : ৪২-৪৩)। উত্তরে তার বাবা বললেন, ‘ইবরাহিম! তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ? যদি আল্লাহর ইবাদত থেকে ফিরে না আসো, তাহলে প্রস্তুরাঘাতে তোমার প্রাণনাশ করব।’ (সুরা মারইয়াম : ৪৬)।
পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া মহাপাপ : আমাদের ঘুণেধরা সমাজের অনেক অবুঝ সন্তান তাদের বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়। তাদের যাচ্ছেতাই বলে গালিগালাজ করে। দিনরাত তাদের অপমান-অপদস্থ সইতে হয় বেচারা বাবা-মাকে। অথচ এটা জঘণ্য ও গর্হিত কাজ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গোনাহের ব্যাপারে বলব?’ সাহাবিরা বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রাসুল!’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া।’ (বোখারি : ৫৯৭৬)।