প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২১ আগস্ট, ২০২৫
ফরজের বাইরে নবীজি (সা.) যেসব নামাজ পড়েছেন, সেগুলোকে সাধারণত সুন্নত নামাজ বলা হয়। আবার কিছু আছে সেগুলোকে নফল বলে আখ্যায়িত করা হয়। এসব নামাজের জন্য আজান-ইকামতের দরকার পড়ে না।
নফল নামাজের প্রকার : নফল নামাজ দুই প্রকার- ১. এমন নফল নামাজ যার নির্ধারিত কোনো সময় নেই, বরং মাকরুহ সময় ছাড়া যেকোনো সময় আদায় করা যায়। যেমন সালাতুল হাজত (প্রয়োজন পূরণের নামাজ), সালাতুত তসবি, সালাতুত শোকর, তাহিয়াতুল অজু, তাহিয়াতুল মসজিদ ইত্যাদি। ২. এমন নফল নামাজ যার নির্ধারিত সময় রয়েছে। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরবর্তী নফল, এ ছাড়া সালাতুত দোহা, কিয়ামুল লাইল, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের নামাজ ইত্যাদি।
নফল নামাজের পুরস্কার : নফল নামাজ মহান আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার মাধ্যম। এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। ফরজে হয়ে যাওয়া ত্রুটির ক্ষতিপূরণ হয়। নিজের আমলনামায় অতিরিক্ত কিছু নেকি অর্জন হয়। গোনাহ মিটে যায়। সওয়াব-প্রতিদান দ্বিগুণ হয়। আগের গোনাহ মাফ হয়। দুনিয়া-আখেরাতে উঁচু মর্যাদা লাভ হয়। অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। নফল নামাজের মাধ্যমে অধিক পরিমাণে মহান আল্লাহর সমীপে সেজদা ছাড়া কেউ আল্লাহর অলি, প্রিয় বান্দা হতে পারবে না। হজরত মাদান ইবনে আবু তালহা ইয়ামুরি বলেন, আমি রাসুলের (সা.) কৃতদাস সাওবানের (রা.) সঙ্গে দেখা করলাম। আমি তাকে বললাম, আমাকে এমন একটি আমল সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেন যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তিনি বললেন, আমি রাসুল (সা.)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলেছেন, আল্লাহকে অধিক পরিমাণে সেজদা করো। তুমি আল্লাহকে একটা সেজদা করলে এর দ্বারা আল্লাহ তোমার একটি স্তর উঁচু করে দেবেন এবং একটি গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (মুসলিম : ৪৮৮)।
বেলাল (রা.)-কে নবী (সা.) লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে বেলাল, ইসলামে তোমার কৃত আমল সম্পর্কে আমাকে অবহিত করো। কেননা, আমি জান্নাতে তোমার পায়ের ধ্বনি আমার আগে শুনেছি। বেলাল (রা.) বললেন, আমি আশা রাখতে পারি এমন কোনো আমল করিনি। হ্যাঁ, দিনে-রাতে যখনই অজু করি, তখন অজুর সঙ্গে দুই রাকাত নফল অবশ্যই পড়ে নিই।’ (বোখারি)।
নফল নামাজের নিয়ত : নফলকে যেহেতু সুন্নতও বলা হয়, তাই নিয়তে সুন্নতও বলা যাবে, নফলও বলা যাবে। সুন্নত-নফল কিছু না বললেও অসুবিধা নেই। আর নফল নামাজে দুই রাকাত করে নিয়ত করা উত্তম। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রাত-দিনের (নফল) নামাজ দুই দুই রাকাত।’ (ইবনে খুজায়মা : ১২১০)। এক সালামে রাসুল (সা.) চার রাকাত। নফল পড়েছেন বলে প্রমাণ মেলে না। নফল নামাজ নিয়ত করে ছেড়ে দিলে পরবর্তীতে কাজা করতে হবে।
নফল নামাজের কেরাত : নফল নামাজে যেকোনো সুরা-কেরাত পড়ার অবকাশ আছে। এতে সুরার তারতিব বা ধারাবাহিকতা ধরে রাখাও জরুরি নয়। কেরাত আস্তে পড়তে হয়। তবে রাতের নামাজে জোরে পড়ারও সুযোগ আছে।
নফল নামাজ পড়ার স্থান : বাসাবাড়ি, মসজিদ সব জায়গায় নফল নামাজ পড়া যায়। তবে মসজিদের তুলনায় বাসাবাড়িতে নফল নামাজ পড়া উত্তম। অবশ্য যে নফল নামাজে জামাতের শর্ত আছে তা ব্যতিক্রম। যেমন তারাবির নামাজ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ফরজ ছাড়া উত্তম (নফল) নামাজ হলো ঘরে নামাজ আদায়।’ (বোখারি : ৭৩১)।
নফল নামাজ দাঁড়িয়ে না বসে : কোনো ওজর ছাড়াও নফল নামাজ বসে বসে পড়া জায়েজ। অবশ্য ওজর ছাড়া বসে পড়লে দাঁড়িয়ে পড়ার তুলনায় সওয়াব অর্ধেক হবে। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বসে নামাজ পড়া সম্পর্কে নবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছেন, ‘বসে নামাজের চেয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া উত্তম। বসে নামাজ পড়লে দাঁড়িয়ে নামাজের চেয়ে অর্ধেক সওয়াব হবে এবং শুয়ে নামাজ পড়লে বসে পড়ার চেয়ে অর্ধেক সওয়াব হবে।’ (আবু দাউদ : ৯৫১)।
দাঁড়িয়ে নফল শুরু করে বসে পড়া কিংবা বসে শুরু করে দাঁড়িয়ে বাকিটা শেষ করা যাবে। তবে উত্তম হলো যেভাবে শুরু করা হয়েছে সেভাবে শেষ করা। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ২/৩৮৯)।
বাহনে নফল নামাজ : বাস, গাড়ি, ঘোড়া, উটসহ যেকোনো বাহনে বসে বসে ইশারা করে নফল নামাজ পড়া যাবে। ফরজ নামাজে এ ধরনের সুযোগ নেই। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-কে সবদিকে ফিরে বাহনে থাকাবস্থায় নামাজ পড়তে দেখেছি। তবে সেজদা দুটিতে তিনি রুকুর তুলনায় একটু বেশি ঝুঁকতেন’ (ইবনে হিব্বান : ২৫২১)।