ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বোনের হকের বিধান

মুফতি ওমর ফারুক আশিকী
বোনের হকের বিধান

আমাদের সমাজে মিরাস বা উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে অসংখ্য ভুল ধারণা ও অন্যায় প্রথা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য ও অমানবিক একটি সমস্যা হলো বোনদের তাদের প্রাপ্য উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা। এটি এতই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, কোনো বোন যদি বিপদে পড়ে বা নিজের প্রয়োজনে তার ন্যায্য মিরাসের ভাগটুকুও চাইতে যান, তবে তাকে তিরস্কার করা হয়, এমনকি সমাজের চোখে ছোট করা হয়। এর চেয়েও দুঃখজনক হলো, যদি কোনো বোন তার প্রাপ্য সম্পদ নিয়ে যায়, তা হলে তাকে ভাইদের কাছ থেকে ভবিষ্যতে কোনো আশ্রয় বা সহায়তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। কার্যত সে তার নিজের ভাইদের কাছেই মাথা গোঁজার ঠাঁই হারায়। এ ধরনের আচরণ জাহেলি যুগের চরম বৈষম্যমূলক, অনৈতিক ও অমানবিক প্রথারই প্রতিচ্ছবি। ইসলাম এমন অন্যায়কে কঠোরভাবে নিন্দা করে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট উত্তরাধিকারের বিধান রেখেছেন, যা কারও পক্ষে পরিবর্তন করার কোনো অধিকার নেই। বোনদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা শুধু শরিয়ত লঙ্ঘনই নয়, এটি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো মারাত্মক অপরাধ।

বোনের হক কী এবং কখন তা আদায় হয়? অনেকে মনে করেন, বোনদের খোঁজখবর নিলেই বুঝি ভাইয়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। মনে রাখা দরকার, বোনের হক ভাই আদায় করেছে, এ কথা তখনই বলা হবে, যখন বোনদের তাদের শরিয়তসম্মত পাওনা মিরাস সম্পূর্ণভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এর পরই সাধ্যমতো তাদের খোঁজখবর নেওয়া, বিপদণ্ডআপদে পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা দেখানো অতিরিক্ত নেকির কাজ। মিরাস বুঝিয়ে না দিয়ে শুধু খোঁজখবর নিলেই হক আদায় হয় না, বরং তা হয় এক প্রকারের প্রতারণা।

কেন এই অমানবিক প্রথা বন্ধ হওয়া উচিত? বোনেদের মিরাস থেকে বঞ্চিত করা একদিকে যেমন আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা, অন্যদিকে তেমনি পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করার শামিল। এই প্রথা সমাজে বিভেদ তৈরি করে, আস্থা নষ্ট করে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমিয়ে দেয়। ইসলাম পারিবারিক সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাকে হারাম ঘোষণা করেছে। আমাদের সবার উচিত এই জাহেলি প্রথা থেকে বেরিয়ে আসা। বোনদের প্রতি ন্যায়বিচার করা এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দেওয়া শুধু তাদের হকই নয়, বরং এটি আমাদের ঈমানের দাবি। আসুন, আমরা এই অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই এবং প্রত্যেক বোনের অধিকার নিশ্চিত করি, যাতে আমাদের পরিবার ও সমাজে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত