ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নামাজের নিয়ত করা আবশ্যক

ফারহান হাসনাত
নামাজের নিয়ত করা আবশ্যক

নামাজের নিয়ত নিয়ে সমাজে নানা কথা প্রচলিত আছে। কেউ বলেন, আরবিতে নিয়ত করতে হবে। কেউ বলেন, বাংলায় করলেও চলবে। কেউ বলছেন, জোরে করতে হবে কিংবা কেউ বলছেন, আস্তে করলেও চলবে। নিয়ত আরবি শব্দ। অর্থ ইচ্ছা বা সংকল্প। নিয়ত অন্তরে করলেই হয়ে যায়। মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। শুধু নামাজ নয়, যেকোনো ইবাদতের জন্যই নিয়ত করতে হবে। নিয়ত না করলে ইবাদতই হবে না। প্রতিটি ব্যক্তি সেই সওয়াব পাবে, যেটার জন্য সে নিয়ত করেছে। নিয়ত না করলে সওয়াব পাওয়া যায় না। সুতরাং নিয়ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।

নামাজের জন্য আরবি বা মৌখিক নিয়ত জরুরি নয়; বরং অন্তরের সংকল্পই যথেষ্ট। কোন ওয়াক্তের (ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব নাকি এশার), কত রাকাত (দুই, তিন নাকি চার), কি নামাজ (ফরজ, ওয়াজিব নাকি সুন্নত), কীভাবে (একাকী নাকি ইমামের পেছনে জামাতে) পড়ছেন- মনে মনে তার নিয়ত করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমলের বিশুদ্ধতা বা আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বোখারি : ১)। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তাদেরকে এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে।’ (সুরা বাইয়িনাহ : ৫)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নেক কাজ ও গোনাহের কাজ লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর তিনি এভাবে বর্ণনা করেছেন; যে ব্যক্তি নেক কাজ করার ইচ্ছা করে, কিন্তু এখনও তা বাস্তবে আমল করেনি। আল্লাহ তার জন্য তার কাছে একটি পরিপূর্ণ নেকি লিপিবদ্ধ করেন। আর যদি সে নেক কাজ করার ইচ্ছা করে এবং তার ওপর আমল করে তা হলে আল্লাহ তাঁর কাছে ১০ থেকে ৭০০ গুণ বা আরও বেশি বাড়িয়ে নেকি লিপিবদ্ধ করেন। যদি সে গোনাহের কাজের ইচ্ছা করে এবং তা বাস্তবে পরিণত না করে, তবে আল্লাহ তাঁর কাছে একটি পরিপূর্ণ নেকি লেখেন। আর যদি সে গোনাহের ইচ্ছা করে এবং কাজে পরিণত করে, আল্লাহ একটিমাত্র গোনাহ লিখে রাখেন।’ (বোখারি : ৬৪৯১)।

নামাজে আল্লাহকে কাছে পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো, একনিষ্ঠ ও একাগ্রতার সঙ্গে নামাজ আদায় করা। একনিষ্ঠ ও একাগ্রতা তৈরি হয় দৃষ্টি সংযত রাখার মাধ্যমে। দাঁড়ানো অবস্থায় সেজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতে হবে, যেন পূর্ণ একাগ্রতা তৈরি হয়। দাঁড়ানো ও রুকু অবস্থায় সেজদার জায়গায় দৃষ্টি এবং বসা অবস্থায় শাহাদাত আঙুলের দিকে দৃষ্টি রাখা সুন্নত। এক বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ানো এবং রুকু অবস্থায় সেজদার জায়গায় চোখের দৃষ্টি রাখতেন। আর বসা অবস্থায় শাহাদত আঙুলের দিকে দৃষ্টি রাখতেন।’ (নাসায়ি : ১১৬০, ১২৭৫)।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নামাজে দাঁড়াতেন, তখন মাথাটা নিচু করে ঝুঁকিয়ে রাখতেন এবং দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন জমিনের দিকে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৪৭৯)।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, নামাজের সময় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সেজদার দিকে থাকবে, রুকু অবস্থায় থাকবে দুই পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় থাকবে কোলের দিকে, সেজদা অবস্থায় থাকবে নাকের দিকে। (কিতাবুল মাবসুত : ১/২৮)। তবে কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, পুরো নামাজের সময় দৃষ্টি থাকবে সেজদার দিকে।

নামাজে দাঁড়িয়ে এদিক-সেদিক তাকানো যাবে না। একাগ্রতা ধরে রাখতে হবে। পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে। এদিক-সেদিক তাকানো শুভলক্ষণ নয়। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছি, নামাজে এদিক-সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন, এটি হলো শয়তানের ছোঁ মারা, যা দিয়ে শয়তান আল্লাহর বান্দাদের নামাজ থেকে অমনোযোগী ও উদাসীন করে ফেলে।’ (বোখারি : ৭১৮)। তবে কোনোভাবে কারও দৃষ্টি এদিক-সেদিক চলে গেলে নামাজ ভঙ্গ হবে না। (আদ দুররুল মুখতার : ১/৪৪৭)।

নামাজ অবস্থায় চোখ বন্ধ রাখা যাবে না। আল্লামা ইবনে হুমাম (রহ.) বলেন, ‘চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়া মাকরুহ। কেননা, রাসুলুল্লাহ (সা.) চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। সুন্নত হচ্ছে, সেজদার স্থানের দিকে তাকিয়ে নামাজ পড়া। নামাজে চোখ বন্ধ রাখলে এই সুন্নত ছুটে যায়।’ (বাদায়েউস সানায়ে : ১/২১৬)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত