ঢাকা শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চলুন জান্নাত থেকে ঘুরে আসি...

চলুন জান্নাত থেকে ঘুরে আসি...

কোরআন ও সুন্নাহে জান্নাত সম্পর্কে অনেক বর্ণনা এসেছে। এখানে জান্নাত সম্পর্কে বর্ণিত নবীজি (সা.) এর কিছু বিশুদ্ধ হাদিস তুলে ধরা হলো, যা আমাদের হৃদয়ের চোখের সামনে জান্নাতকে দৃশ্যমান করে তুলবে।

১. জান্নাতের ১০০টি স্তর রয়েছে। প্রতি দুই স্তরের মধ্যে আসমান-জমিনের সমান ব্যবধান বর্তমান। ফেরদাউস হচ্ছে সবচেয়ে উঁচু স্তরের জান্নাত, সেখান থেকেই জান্নাতের চারটি ঝরনা প্রবাহিত হয় এবং এর ওপরেই (আল্লাহ তায়ালার) আরশ স্থাপিত। নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করার সময় ফেরদাউসের প্রার্থনা করবে।’ (তিরমিজি : ২৫৩১)।

২. জান্নাতে রয়েছে নির্মূল পানির সমুদ্র, মধুর সমুদ্র, দুধের সমুদ্র এবং মদের সমুদ্র। এগুলো থেকে আরও ঝরনা বা নদীগুলো প্রবাহিত হবে। (তিরমিজি : ২৫৭১)। জান্নাতের এই মদে জ্ঞানশূন্য হয় না, কোনো মাথাব্যথায়ও ধরে না। (সূরা আল-ওয়াকিআ : ১৯)।

৩. জান্নাতবাসিনী কোনো নারী যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি দেয়, তবে গোটা জগৎ আলোকিত হয়ে যাবে এবং আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী স্থান সুগন্ধিতে মোহিত হয়ে যাবে। তাদের মাথার ওড়নাও গোটা দুনিয়া ও তার সম্পদরাশি থেকে উত্তম। (বোখারি : ৬৫৬৮)।

৪. জান্নাতে কারও ধনুক অথবা কারও পা রাখার স্থান দুনিয়া ও তাতে যা আছে, তা থেকেও উত্তম। (বোখারি : ৬৫৬৮)।

৫. জান্নাতের একটি গাছের নিচের ছায়ায় কোনো সওয়ারি যদি ১০০ বছরও সওয়ার করে, তবুও তার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। (বোখারি- ৬৫৫২)।

৬. জান্নাতে মুক্তা দিয়ে তৈরি ৬০ মাইল লম্বা একটি তাঁবু থাকবে। জান্নাতের পাত্র ও সামগ্রী হবে স্বর্ণ ও রূপার। (বোখারি : ৪৮৭৯)।

৭. সেখানে জান্নাতিদের জন্য থাকবে প্রাসাদ আর প্রাসাদ। প্রাসাদের ওপর নির্মিত থাকবে, আরও প্রাসাদ। (সুরা আয-যুমার : ২০)।

৮. পূর্ণিমার চাঁদের মতো রূপ ধারণ করে জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের অন্তরে কোনো হিংসাবিদ্বেষ থাকবে না। তারা কখনও রোগাক্রান্ত হবে না। তাদের প্রস্রাব-পায়খানা হবে না। তারা থুথু ফেলবে না। তাদের নাক দিয়ে ময়লা ঝরবে না। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের। তাদের ধুনির জ্বালানি হবে আগরের। তাদের গায়ের গন্ধ হবে কস্তুরির মতো সুগন্ধি। তাদের স্বভাব হবে এক ব্যক্তির মতো। তাদের শারীরিক গঠন হবে (আদি পিতা) আদাম (আ.)-এর মতো (অর্থাৎ ৬০ হাত লম্বা)। (বোখারি : ৩৩২৭)।

৯. জান্নাতিদের খাবারগুলো ঢেঁকুর এবং মিশকঘ্রাণযুক্ত ঘর্ম দ্বারা নিঃশেষ হয়ে যাবে। (মুসলিম : ৭০৪৬)।

১০. জান্নাতিরা সুখ-শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে ডুবে থাকবে। হতাশা, দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা থাকবে না। পোশাক-পরিচ্ছেদ ময়লা হবে না, পুরাতন হবে না। তাদের যৌবনও নিঃশেষ হবে না। (তিরমিজি : ২৫২৬)।

১১. জান্নাতবাসী সব সময় জীবিত থাকবে। কখনও মৃত্যুবরণ করবে না। সব সময় যুবক-যুবতী থাকবে, বৃদ্ধ হবে না। (মুসলিম : ৭০৪৯)।

১২. জান্নাতবাসীর প্রতি আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘আমি তোমাদের ওপর আমার সন্তুষ্টি অবধারিত করব। অতঃপর আমি আর কখনও তোমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হবো না।’ (বোখারি : ৬৫৪৯)।

১৩. জান্নাতের ইট স্বর্ণ ও রোপ্য দ্বারা তৈরি। কঙ্কর হলো মণিমুক্তা, আর মশলা হলো সুগন্ধীময় কস্তুরি। (তিরমিজি : ২৫২৬)।

১৪. জান্নাতের সব গাছের কা- হবে স্বর্ণের। (তিরমিজি : ২৫২৫)।

১৫. জান্নাতের ১০০ স্তরের যে কোনো এক স্তরে সারাবিশ্বের সব মানুষ একত্রিত হলেও তা যথেষ্ট হবে। (তিরমিজি)।

১৬. জান্নাতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে ১০০ জন পুরুষের সমান যৌনশক্তি ও সঙ্গম ক্ষমতা প্রদান করা হবে। (তিরমিজি : ২৫৩৬)।

১৭. জান্নাতবাসী লোম, গোঁফ ও দাড়িবিহীন হবে। তাদের চোখ সুরমা মাখানো হবে। (তিরমিজি : ২৫৪৫)।

১৮. জান্নাতবাসী উট ও ঘোড়া চাইলে দু’টোই পাবে এবং তা ইচ্ছেমতো দ্রুত উড়িয়ে নিয়ে যাবে। তাতে সেসব জিনিস পাবে, যা কিছু মন চাইবে এবং নয়ন জুড়াবে। (তিরমিজি)।

১৯. জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমায় জান্নাতি লোকরা এতে একত্রিত হবে। তারপর উত্তর দিকের বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধুলাবালি তাদের মুখম-ল ও পোশাক-পরিচ্ছদে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য এবং শরীরের রং আরও বেড়ে যাবে। তারপর তারা নিজের পরিবারের কাছে ফিরে আসবে। এসে দেখবে, তাদেরও শরীরের রং এবং সৌন্দর্য বহু বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের পরিবারের লোকরা বলবে, ‘আল্লাহর শপথ! আমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর তোমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।’ উত্তরে তারাও বলবে, ‘আল্লাহর শপথ! তোমাদের শরীরের সৌন্দর্য তোমাদের কাছে থেকে যাওয়ার পর বহুগুণে বেড়ে গেছে।’ (মুসলিম : ৭০৩৮)।

২০. জান্নাতে একজন কৃষিকাজ করতে চাইবে। তারপর সে বীজ বপণ করবে এবং চোখের পলকে অঙ্কুরিত হবে, পোক্ত হবে এবং ফসল কাটা হবে। এমনকি পাহাড় পরিমাণ স্তূপ হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! এগুলো নিয়ে যাও, কোনো কিছুই তোমাকে তৃপ্তি দেয় না!’ (বোখারি : ২৩৪৮)।

২১. জান্নাতে এমন সব নেয়ামত প্রস্তুত রয়েছে, যা কখনও কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো অন্তর কল্পনাও করেনি। (বোখারি : ৩২৪৪)।

আলোকিত ডেস্ক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত