ঢাকা মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জিম্বাবুয়ে সিরিজে নতুন কিছু দেখাতে চান শান্তরা

জিম্বাবুয়ে সিরিজে নতুন কিছু দেখাতে চান শান্তরা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা-আইসিসির টেস্ট পরিবারের সদস্য হিসেবে দুই যুগ কাটিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এখনও নিজেদের পায়ের নিচে জমিন শক্ত করতে পারেনি টাইগাররা। শিশু-কৈশর পেরিয়ে যুবক রুপে এখনও রীতিমতো ধুঁকছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। যে অবস্থানে যাওয়ার কথা ছিল তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি। কালেভাদ্রে এসেছে সাফল্য। সে সাফল্যের ছিল না ধারাবাহিকতা। এর পেছনে বড় কারণ টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে তুলতে না পারা। যার দায় ক্রিকেট প্রশাসন থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দেরও। এদেশের ক্রিকেট প্রশাসকদের ভাবনা, তাদের ক্রিকেট পরিচালনার ধরন, ক্রিকেটারদের গড়ে উঠার প্রক্রিয়া, তাদের মানসিকতা, ক্রিকেট কাঠামো সবকিছুই সাদা পোশাকের অভিজাত ক্রিকেটটা এগিয়ে যাওয়ার অন্তরায়। টেস্ট ক্রিকেটের আলাদা যে আমেজ, এগিয়ে যাওয়ার যেই নিবেদন ও পরিকল্পনা থাকার কথা তা একেবারেই অনুপস্থিত।

দুই একটা বিচ্ছিন্ন সাফল্যে ক্রিকেটার, কর্তরা খুশি হয়ে যান। ব্যর্থতায় আবার আশ্বাস দেন নিজেদের শোধরানোর। কিন্তু হিতেবিপরীত হয় বারবারই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নামার আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার সকাল থেকে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। ঘাম ঝরানো অনুশীলন শেষে হাসিমুখে সংবাদ সম্মেলনে আসেন শান্ত। যেখানে প্রথম প্রশ্নটাই হয়েছিল দেশের টেস্ট সংস্কৃতির ঘাটতি নিয়ে।

এজন্য টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে তোলার জোর আহ্বান শান্তর, ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ (টেস্ট সংস্কৃতি)। এত বছর টেস্ট খেলার পরও যখন আমাদের টেস্ট সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলতে হয়, তাহলে খুবই দুঃখজনক।’ সেই প্রক্রিয়া শান্ত শুরু করেছেন বলে দাবি করলেন, ‘তবে আমরা যদি গত বছর থেকে শুরু করি, আমরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ১২টি ম্যাচের মধ্যে চারটি জিতেছিলাম এবং চারটি জয়ই বড় দলের বিপক্ষে।

গত বছর থেকে এই দলটা একটা সংস্কৃতি তৈরি করতে এবং আমরা কীভাবে খেলতে চাই এই বিষয়গুলো নিয়ে কথার্বাতা হচ্ছিল এবং নতুন কোচ আসার পর তার একটা পরিকল্পনা আছে এবং সে আসলে দলটাকে কীভাবে সামনে নিয়ে যেতে চায় এরই মধ্যে খেলোয়াড়দের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। পাশাপাশি আমরা যারা খেলছি তাদের একটা ইনপুট তো ছিলই। আমি আশা করব, এ বছর আমাদের যেই পাঁচটি-ছয়টি টেস্ট ম্যাচ আছে নতুন কিছু আমরা দেখতে পারব।’

শান্তর নজরে এসেছে বিশেষ কিছু। সফররত জিম্বাবুয়ে দলকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা, মজাও করা হয় অনেক সময়। গণমাধ্যমে আসে অনেক কিছু। আবার প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে উঠেছে ‘আপদ’। যেখানে পান থেকে চুন খসলেই করা হয় কটাক্ষ। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাফল্যে মেলে না করতালি। এজন্য ভাবনার বদলের জোর দাবি জানিয়ে রাখলেন অধিনায়ক। প্রতিপক্ষ যেই হোক, শান্ত চান সবাইকে এক চোখে দেখতে। বোলার যেই হোক তাকে শক্তিশালী হিসেবেই মূল্যায়ন করার নিবেদন অধিনায়কের, ‘না আমরা সেভাবে দেখছি না (জিম্বাবুয়েকে ছোট দল হিসেবে)। এই জিনিসগুলো অনেক সময় আপনাদের থেকে আসে।

আবার সাধারণ মানুষ যারা খেলা অনুসরণ করেন তারা এই জিনিসগুলো তুলনা করে থাকেন। যেটা, জিম্বাবুয়ে বা ছোট দল নাকি বড় দল এই জিনিসগুলো।’ ‘পেশাদার ক্রিকেটে হিসেবে আমরা বল বাই বল চিন্তা করি। কীভাবে ওই বলটার সঙ্গে আমরা লড়াই করে জিততে পারি। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা কীভাবে আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে পারি, প্রতিপক্ষ যে দলই হোক না কেন। একটু আগে বললাম, সংস্কৃতি। আমরা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে যেভাবে খেলব, সেই মন মানসিকতায়, সেই শারীরিক ভাষা, সেই চিন্তাভাবনা যেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে থাকে বা একটা বড় দলের বিপক্ষে থাকে। এই জায়গায় যেন আপনাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য তৈরি না হয়।’

জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকেই ভাবনার বদলের দাবি তুললেন শান্ত, ‘আমি মনে করি, আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে এরকম ভাবনা নেই যে, ছোট দলের বিপক্ষে খেলছি বা বড় দেলর বিপক্ষে খেলছি। উন্নতির জায়গা আছে। আমি মনে করি এখান থেকে আমরা সেই শুরুটা করতে পারি।’ শান্ত সাহায্য চাইলেন সবার, ‘অধিনায়ক হিসেবে আমি যেটা চিন্তা করি, প্রত্যেকটা ম্যাচ যেন জেতার জন্য খেলি। এখানে স্রেফ ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা আমাদের কারোরই নেই। আমি একটু আগে বললাম, নতুন কিছু আমরা চেষ্টা করব এবং এটাও শুরু হবে আগামীকাল থেকে। এটার জন্য যে ধরনের মন-মানসিকতা, প্রস্তুতি থাকার কথা সেটা খেলোয়াড়রা নিচ্ছে। আমি আশা করব, যারা আমাদের হেল্প করেন, যারা ম্যানেজমেন্টে আছেন, যারা ক্রিকেট বোর্ডে আছেন তারাও আমাদের হেল্প করবেন। আমি বিশ্বাস করি, যেহেতু আমাদের ২০-২২ বছর টেস্ট ক্রিকেট একই ধরনের ছিল এবং খুব বেশি উন্নতি হয়নি তারমানে এই জায়গাটাতে নিশ্চয়ই কিছু পরিবর্তনের দরকার আছে। ওই পরিবর্তনটা করার আমরা চিন্তা করছি। আমি আশা করব, এই পরিবর্তনটা টেস্ট ক্রিকেটে কাজে আসবে।’

অবকাঠামোরও উন্নতি চাইলেন শান্ত, ‘ফ্যাসিলিটিজটাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আমরা যখন বাইরে খেলতে যাই তখন উইকেটগুলো ভিন্ন থাকে। উইকেট একটা বড় বিষয়। আমরা যেন ভালো উইকেটে অনুশীলন করতে পারি। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যেন ওই ধরনের উইকেটে খেলতে পারি। এই বিষয়গুলো আছে। আবার কিছু সময়ে কিছু খেলোয়াড় ফেল করবে। তাদের যেন ব্যাক করা হয়। এই বিষয়গুলো নিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে টুকটাক আলোচনা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি ক্রিকেট বোর্ড ওই খেলোয়াড়দের পাশে থাকবে। পরিবর্তন যখন হবে, শুরুতে রেজাল্ট হওয়াটা কঠিন। ওই শুরুর সময়ে কোনো খেলোয়াড় যদি পারফর্ম না করে তাহলে ওই খেলোয়াড়টাকে যেন সবাই মিলে ব্যাক করে।’

আলোচনায় থাকা গতি তারকা নাহিদ রানাকে খেলার ঝামেলা সে কারণে ভালো করেই জানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু শন উইলিয়ামস তো নাহিদ রানাকে খেলেননি। তার জানার কথা নয়। কোনো সংস্করণেই নাহিদ রানার বিপক্ষে খেলেননি জিম্বাবুয়ের এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তাই নাহিদ রানার গতি প্রসঙ্গে গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে খোঁচা মেরেছিলেন। সেই খোঁচার জবাব শনিবার ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছেন নাজমুল। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, নাহিদ রানা কেমন বোলার, সেটা ম্যাচেই টের পাবে জিম্বাবুয়ে। উইলিয়ামসের খোঁচা নিয়ে প্রশ্নে নাজমুল বলেছেন, ‘কালকে ম্যাচে ও যখন বল করবে, আর প্রতিপক্ষ যখন ব্যাটিং করবে, তখন ব্যাটসম্যানদের শারীরিক ভঙ্গি দেখলেই বুঝতে পারবেন, নাহিদ কতটা ব্যতিক্রম।’ নাহিদ রানার গতি জিম্বাবুয়ের চিন্তার কারণ নয়, গতকাল এটাই পরোক্ষভাবে বলেছিলেন উইলিয়ামস।

অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার বলেছিলেন, ‘এখনকার দিনে অনেক বোলারই আছে দ্রুতগতিতে বল করতে পারে। দুনিয়ায় শুধু একজনই জোরে বল করে না। আমরা এটার জন্য প্রস্তুত। আমাদের কাছে বোলিং মেশিন আছে, যা মানুষের চেয়ে দ্রুতগতিতে বল করে।’ নাহিদের প্রতি দলের বার্তা কী? অধিনায়ক নাজমুল সেটিও পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ‘ওকে অনেক আগে থেকেই আমি চিনি। যখন ও কিছুই খেলেনি, একাডেমিতে অনুশীলন করত, তখন থেকেই চিনি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত একটি বার্তাই দেয়া হয়েছে, ও যেন ১৪০-এর বেশি গতিতে বল করে। এখন পর্যন্ত বার্তা পরিষ্কার। আশা করব, কালকে যদিও খেলে, ১৪০ কিলোমিটারের এর চেয়ে বেশি জোরে বল করবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত