ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আপাতত শাস্তি নয়, আজ খেলছেন হৃদয়

বোর্ডের কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট ক্রিকেটাররা

বোর্ডের কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট ক্রিকেটাররা

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তাওহীদ হৃদয়কে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেয়াসহ বেশ কিছু ঘটনায় অসন্তুষ্ট ক্রিকেটাররা। নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা জানাতে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে গতকাল শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আঙিনায় জড়ো হয়েছিলেন ক্রিকেটারারা। দুপুরে মিরপুরের একাডেমি ভবনে প্রথমে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন ক্রিকেটাররা। এরপর তামিমের নেতৃত্বে তারা বিসিবি কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন বোর্ড প্রধান ফারুকের সঙ্গে। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিবির দুই পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও ইফতেখার রহমান মিঠু। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করলেন ক্রিকেটাররা।

পরে সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তামিম ইকবাল বললেন, গত মাস চারেকের বেশ কিছু ঘটনায় ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন তারা। এসব নিয়ে ক্রিকেটারদের সবাই অসন্তুষ্ট। বিসিবি প্রধানের সঙ্গে সভার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম। ‘আমরা মূলত যে কারণে এখানে সবাই একসঙ্গে হয়েছি, সেটা হলো সর্বশেষ দুই তিন মাসে কিছু ঘটনা ঘটছে, যা নিয়ে প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের মনে একটা কষ্ট ছিল, খেলোয়াড়রা ভীষণ আপসেট। যে ধরনের ব্যবহার বা যে ধরনের কাজ-কর্ম হচ্ছিল, আমি দুই তিনটা পয়েন্ট আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারব। এখানে একটা ইস্যু তাওহিদ হৃদয়। বাকি দুইটা কেউ যদি অপরাধ করে থাকে আমরা সবাই চাই তার শাস্তি হোক। কিন্তু এর একটি প্রক্রিয়া আছে। আপনি তাদের প্রকাশ্যে অপমান করতে পারেন না। এটা হতে পারে না।’

অসুস্থতার জন্য আপাতত ক্রিকেটের বাইরে আছেন তামিম। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের পর অন্তত তিন মাস তার ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হবে। তবে ক্রিকেটারদের ডাকে তিনি ছিলেন শুক্রবারের সভায়। সতীর্থদের হয়ে তাদের কথাগুলো বললেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। ‘প্রথম কথা হলো তাওহিদ হৃদয়ের ইস্যুটা। ওর সঙ্গে মাঠে একটা ঘটনা ঘটে, ওকে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করে। তখন কিন্তু কোনো খেলোয়াড় বা কেউ এটা নিয়ে কথা বলেনি। আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি মিলে তাকে নিষিদ্ধ করেন। ব্যক্তিগতভাবে আমরা মনে করতে পারি যে, সিদ্ধান্তটা কঠোর ছিল। কিন্তু এটা নিয়ে আমরা কিন্তু কেউ কোনো কথা বলিনি।’ ‘এর কিছুদিন পর দেখলাম যে দুই ম্যাচ থেকে (শাস্তি কমিয়ে) এক ম্যাচ করা হলো। এটা বিসিবি করেছে, তখনও আমরা কেউ কোনো কথা বলিনি। তারপর হৃদয় (শাস্তির জন্য) একটা ম্যাচ না খেলে তারপর দুটা ম্যাচ খেলল। স্বাভাবিকভাবে ওর যে শাস্তি ছিল, সেটা সে ভোগ করে নিয়েছে।

এখন দুটা ম্যাচ খেলার পর কালকে শুনলাম যে তাকে আবার নিষিদ্ধ করছে!’ এর কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না তামিম। এক্ষেত্রে নিজেদের ক্ষোভও লুকালেন না তিনি। ‘এটা কোন নিয়মে, কীভাবে করছে এটা আমার কাছে জানা নেই। এটা নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম। এটা হাস্যকর ছিল। কোনোভাবে সাসপেন্ড হতে পারে না। যে ছেলে এরইমধ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে, তাকে বিসিবি খেলতে দিয়েছে দুই ম্যাচে, তাকে আবার আপনি কীভাবে নিষিদ্ধ করতে পারেন? এটা একটা আমাদের বড় পয়েন্ট ছিল। দ্বিতীয়ত, কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ও শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ম্যাচে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা এই জিনিসটা ক্রিকেট বোর্ডকে সরাসরি বলেছি যে দেখেন, যদি ওখানে কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকে বা কোনো খেলোয়াড় কোনো ধরনের দোষ করে থাকে, আমরা সবাই চাই এটার শাস্তি হোক। এতে আমর শতভাগ একমত।’

সাবেক টাইগার দলপতি বলেন, ‘কিন্তু তার মানে এটা না যে, আপনি ওই দুটা ছেলেকে নিয়ে গিয়ে মিডিয়ার সামনে অভিনয় করাবেন, এমনটা করার অধিকার কারোর নেই। বিশ্বের কোথাও দুর্নীতি দমন ইউনিটে এমন নিয়ম নেই যে, আপনি ওই দুটা ছেলেকে বেইজ্জত করবেন মিডিয়ার সামনে, একই জিনিস অভিনয় করিয়ে। এটা খেলোয়াড়দের অপমান করা। এই জিনিস নিয়ে আমরা একবিন্দুও খুশি ছিলাম না।’ গত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ ওঠে কয়েক জন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে। যাদের নাম গণমাধ্যমে আসার পেছনে বিসিবিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তামিম। ‘বিপিএলেও ১০ জনের নাম ফাঁস হয়েছে বিসিবির ভেতর থেকে, ১০ জনের ছবি মিডিয়াতে দেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই চাই ওখান থেকে কেউ যদি দোষী হয় তার শাস্তি হোক। তার যতদূর শাস্তি দেওয়া সম্ভব দেওয়া হোক। কিন্তু ওখানে দুটা নির্দোষ বা আটজন নির্দোষ-তাদের নামগুলো জনগণের সামনে ফাঁস করে দেওয়া অপমানজনক। এই প্রত্যেকটা জিনিস নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় স্টেক হোল্ডার হল ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের যদি এভাবে ট্রিট করা শুরু করেন, তাহলে তো হলো না। এ জিনিস নিয়ে আমরা প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছি আসতে, উনি এসেছেন সঙ্গে আরও দুজন পরিচালক (নাজমুল আবেদীন ও ইফতেখার আহমেদ) ছিলেন। আমরা লম্বা আলোচনা করেছি। আমাদের পয়েন্ট তুলে ধরে উনাকে বলেছি আমরা আপসেট।’

তিনি বলেন, ‘হৃদয়ের বিষয়টা আমরা বলেছি যে এটা কোনোভাবে হয় না। হ্যাঁ, প্রথমে দুই ম্যাচ হয়ে গেলে সেটা ঠিক ছিল। কিন্তু এক ম্যাচ করে দু ম্যাচ খেলতে দিয়ে আবার করা এটা আসলে হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে। তো এ বিষয়গুলো নিয়ে বলছি আপনারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানান, যেহেতু কালকে খেলা। আমি নিশ্চিত উনারা খুবই দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত দেবেন। আপনারা সবাই জানতে পারবেন, আমরাও জানতে পারব। সব ক্রিকেটার এক হয়েছে কারণ দুই তিন মাসের ঘটনাগুলো সবাইকে বিরক্ত করছিল।’

মোহামেডানের চাপের জন্য হৃদয়ের শাস্তি কমে এক ম্যাচ হয়েছিল, এমন অভিযোগ উঠেছে জোরেশোরে। সেদিকে না গিয়ে অসুস্থতার আগ পর্যন্ত মোহামেডানকে নেতৃত্ব দেওয়া তামিম কাঠগড়ায় তুললেন বিসিবিকে। ‘মোহামেডান থেকে চাপ দিয়ে খেলানো হয়েছে কি হয়নি, সেটা জরুরি না। তাকে কি বিসিবি খেলতে অ্যালাউ করেছিল? যদি অ্যালাউ করে তাহলে আবার একই ঘটনায় কীভাবে শাস্তি দেন? এটা নিয়ে আমাদের বিতর্ক হয়েছে। উনাদের আমরা সুন্দর করে অবস্থান পরিষ্কার করেছি আমরা কী অনুভব করি। তারপর উনারা উনাদের মতো সিদ্ধান্ত দেবেন।’

প্রথমে দুই ম্যাচের শাস্তি, পরে তা নেমে আসে এক ম্যাচে। এরপর তাওহিদ হৃদয়কে আবারও দুই ম্যাচের শাস্তি দেখানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। হৃদয়ের বারবার শাস্তির বিষয়টি সামনে আসায় নিন্দা জানান এবং শাস্তি স্থাগিতের আবেদনও করেন। সেই আবেদন আমলে নিয়ে আপাতত তাওহিদ হৃদয়কে শাস্তি দিচ্ছে না বিসিবি। গাজী গ্রুপের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে খেলবেন বিসিবি। সিসিডিএম সূত্র জানিয়েছে তাওহিদ হৃদয়ের শাস্তি এক বছর পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে চিঠি ইস্যু করা হচ্ছে টুর্নামেন্ট টেকনিক্যাল কমিটির পক্ষ থেকে। ওই সূত্র জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার হৃদয়ের দুই ম্যাচের শাস্তি বহাল রাখার কথা বলে গেলেও টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম আনুষ্ঠানিক কোন চিঠি ইস্যু করেননি। তাই হৃদয়ের শাস্তি দুই ম্যাচে বাড়ানোও হয়নি। চিঠি সিসিডিএমকে দেওয়া হলে তারা পদক্ষেপ নিতেন। যেহেতু কোন চিঠিই ইস্যু হয়নি তাই হৃদয়ের সাজা এক ম্যাচই রয়েছে। নতুন চিঠিতে তার সাজা এক বছর স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে সিসিডিএমকে পাঠাবে টেকনিক্যাল কমিটি। এতে করে এই মৌসুমে আর ম্যাচ মিস হচ্ছে না হৃদয়ের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত