সবশেষ ২০০৯-২০১০ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) শিরোপা জিতেছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। এরপর কেটে গেছে এক যুগেরও বেশি সময়। দীর্ঘ এই সময়ে শিরোপা খরা কাটাতে পারেনি ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট খ্যাত দলটি। ১৫ বছর পর এবার দারুণ সুযোগ এসেছিল ঐতিহ্যাহি দলটির সামনে। কিন্তু নাহ! এবারও পারলো না মোহামেডান। নাটকীয় ও উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে সাদাকালোদের শিরোপা স্বপ্ন চুরমার করে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের উল্লাস করল আবাহনী লিমিটেড। গতকাল মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মোহামেডানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হল আকাশী-নীল জার্সিধারীরা।
এবারের ডিপিএলে দুই দলের শেষ রাউন্ডের ম্যাচটি পরিণত হয়েছিল ‘অঘোষিত’ ফাইনালে। দুই পয়েন্টের স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়েছিল আবাহনী লিমিটেড। রান রেটেও বড় ব্যবধানে এগিয়ে। কিন্তু হেড টু হেড বিবেচনায় পিছিয়ে ছিল দলটি। শিরোপা নিশ্চিত করতে মোহামেডানের বিপক্ষে সুপার লিগের শেষ ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না তাদের। সে কাজটি ভালোভাবেই করে দেখাল হান্নান সরকারের শিষ্যরা। এদিন প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪০ রান করে মোহামেডান। জবাবে ৫৬ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের দল। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতল আবাহনী। একই সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো হ্যাটট্রিক শিরোপা তাদের। সবমিলিয়ে এ নিয়ে ২৪ বার এই আসরের চ্যাম্পিয়ন হলো তারা। মোহামেডান নয় বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেলেও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ লিস্ট-এ মর্যাদা পাওয়ার পর আর কোনো শিরোপা জিততে পারেনি। এদিন বোলারদের সৌজন্যে মোহামেডানকে লক্ষ্যের মধ্যেই রাখে আবাহনী। মাঝারী পুঁজি নিয়ে মোহামেডান তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেনি। যদিও দলীয় ১০৮ রানের মধ্যে চার উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ছিলো তারা। কিন্তু এরপর বাকি গল্প শুধুই আবাহনীর। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মোসাদ্দেক ও মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটে আর প্রতিরোধ গড়তে পারেনি সাদাকালোরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ওপেনার শাহরিয়ার কমলকে তুলে মোহামেডানকে ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন ইবাদত হোসেন। কিন্তু এরপর পারভেজ হোসেন ইমনের সঙ্গে জিসান আলমের ৫৬ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে আবাহনী। ইমনকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন সাইফউদ্দিন। ২৮ রান আসে ইমনের ব্যাট থেকে। এরপর দ্রুত এসএম মেহেরব হাসানকে তুলে নেন নাসুম আহমেদ। জিসান আলম এক প্রান্ত আগলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। ব্যক্তিগত ৫৫ রানে নাসুমের বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। তখন জমে উঠেছিল লড়াই। কিন্তু সেই লড়াই এক পেশে করে দেন মিঠুন ও মোসাদ্দেক। গড়েন অবিচ্ছিন্ন ১৩৫ রানের জুটি। ৬৫ বলে ৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৭৮ রান করে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক। আর ৭৯ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৬ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন মিঠুন। এর আগে টস জিতে মোহামেডানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় আবাহনী। তৌফিক খান তুষারকে নিয়ে শুরুটা ভালোই করেন রনি তালুকদার। তাদের ওপেনিং জুটিতে আসে ৫০ রান। এরপর ১৬ রানের ব্যবধানে ফিরে যান এ দুই ওপেনার। ব্যক্তিগত ৪৫ রানে রিপন মণ্ডলের শিকার হন রনি। এর আগে তৌফিককে আউট করেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। দলীয় একশ রান হওয়ার আগে মাহফুজুর রাব্বির শিকার হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন আনিসুল ইসলামও। ফরহাদ হোসেন চেষ্টা করেছিলেন। ব্যক্তিগত ৪২ রানে ফিরে যান মেহেরব হাসানের বলে। এরপর দলের হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল। গড়েন ১১৪ রানের জুটি। তাতেই মাঝারী পুঁজি পায় দলটি।
তবে ফিফটির পরপরই দুই ব্যাটার ফিরে গেলে স্লগ ওভারের সুবিধা নিতে পারেনি মোহামেডান। ব্যক্তিগত ৫০ রানে দুই ব্যাটারকেই ফিরিয়েছেন আবাহনী অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। শেষ পাঁচ ওভারে এসেছে কেবল ২৬ রান। আবাহনীর হয়ে দুটি করে উইকেট পেয়েছেন মোসাদ্দেক ও মৃত্যুঞ্জয়। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা লড়াই নিয়ে এবার নাটক কম হয়নি। শিরোপা জয়ের জন্য তাওহিদ হৃদয়কে খেলাতে শেষ চেষ্টা ছিল মোহামেডানের। আম্পায়ারস কমিটি ও সিসিডিএমের ওপর চাপ প্রয়োগ করে হৃদয়কে খেলানোর অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, ম্যাচ শেষে শিরোপা জিততে ব্যর্থ হওয়ায় সমর্থকদের কটু কথা শুনতে হয়েছে মোহামেডান ক্রিকেটারদের। গ্যালারিতে উঠে গিয়ে কয়েক ক্রিকেটারের দর্শকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ায় ঘটনাও ঘটেছে। এর বাইরে শিরোপা লড়াইয়ে খুব বেশি রোমাঞ্চ ছড়ায়নি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী ও মোহামেডানই ছিল লড়াইয়ে। শিরোপা লড়াই থেমেছিল শেষ ম্যাচে এসে। এমন অলিখিত ফাইনাল হয়ে ওঠা ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানকে হারিয়ে দিল আবাহনী। ক্রিকেটের শিরোপা নিজেদের কাছেই রাখল আকাশীরা।