গত কিছুদিনে সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব নেন সাবেক অধিনায়ক। শুরুতেই তিনি বিপিএল আয়োজন করেন, সেখানে হযবরল অবস্থা ফুটে উঠেছিল। এই নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সম্প্রতি বিসিবির বেশ কিছু এফডিআর বিভিন্ন ব্যাংকে সরানো নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এর বাইরে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ফারুকের বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার পরও কীভাবে বিসিবির সভাপতি হন ফারুক?
তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।
আগের সরকারের সঙ্গে বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি নিজের আনুগত্যের কথা জানালেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ করলেন বোর্ডের ভালো কাজগুলি তুলে ধরতে। গতকাল শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী আয়োজন শেষে সংবাদমাধ্যমে মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন ফারুক আহমেদ। নাজমুল হাসান সভাপতি থাকার সময় এই টুর্নামেন্টের এন্ট্রি ফি বাড়ানো ও দলগুলির অংশগ্রহণ সীমিত করে ফেলা নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছিল। সেটিই এবার নতুন করে চালু হয়ে আসর শেষ করা হলো। তবে ফারুক আহমেদকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মূল কৌতূহল ছিল অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এস এম রানা নামে একজনের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে এখনকার বিসিবি সভাপতির। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে গুলিবর্ষণ এবং হামলা, গুম-খুনের অভিযোগে মামলা আছে এই রানার নামে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু মানুষের সঙ্গে ফারুক আহমেদের সম্পর্কের কথাও সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। তবে বিসিবি সভাপতি বললেন, এসব অভিযোগ বানোয়াট। ‘ফ্যাসিস্ট রেজিমের সঙ্গে এটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বানানো। এটা আমি দীর্ঘ আলোচনা করতে চাই না। আমার ফ্যাসিস্টের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ফ্যাসিস্ট রেজিমের সঙ্গে যদি সম্পর্ক থাকত, আজকে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতাম না। আমি কিন্তু এই নতুন সরকারের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট। এটা আপনাদের বুঝতে হবে। নতুন সরকার যদি আমাকে দেখে যদি বিন্দুমাত্র কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকত আমার (ফ্যাসিস্টের সঙ্গে), তাহলে এখানে আসতাম না।’
ফারুকের ধারণা, বিসিবি সভাপতি পদের প্রতি আগ্রহ থেকে অনেকে তার পিছু লেগেছে। সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ করলেন তিনি ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে। এই জায়গাটা ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, এখানে অনেকের অনেক ধরনের ইন্টারেস্ট থাকতে পারে। তারা হতে পারে (সমালোচনার জন্য দায়ী)। অনেক সময় আমাদের ভালো কাজগুলি নিচে পড়ে যায় বাইরের প্রভাবে। আমরা দুটিই করব, ভালো কাজের প্রশংসা করব, খারাপ কাজের সমালোচনা হবেই। এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু মাঝেমধ্যে ভালো কাজগুলি চাপা পড়ে যায় খারাপ কাজের ভিড়ে।’
‘আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা যদি সত্যিটা তুলে ধরেন, আনবায়াসডলি কাজ করে, আমার মনে হয় যে, অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা থেকে যেন আমরা মুক্ত হতে পারি। আমি এমন একজন মানুষ, সবসময় বলি, আপনারা যদি গঠনমূলক সমালোচনা করেন, সেটা গ্রহণ করি। কিন্তু কিছু বিষয় আছে অহেতুক করা। সেটা আমরা ‘না’ করব। তাহলে মূল ফোকাসটা সরে যায়।’
ভারতীয় দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে অনিশ্চয়তার ব্যাপারটিও সত্যি নয় বলেই মনে করে বিসিবি সভাপতি। টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদনে সূত্রে বরাত দিয়ে গত শুক্রবার খবর প্রকাশিত হয়, এই অঞ্চলের চলমান পরিস্থিতির কারণে ভারতীয় দল অগাস্টে নির্ধারিত বাংলাদেশ সফরে নাও আসতে পারে। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদিন অবশ্য শুক্রবারই খবরটি নাকচ করে দেন। এবার বিসিবি সভাপতিও শোনালেন আশার কথা। ‘ভারত এই মুহূর্তে আমাদেরকে ওরকম কিছু জানায়নি। একটা পত্রিকার নিউজের কথা শুনেছি। তবে ওরা (ভারত) পুরো সফর নিশ্চিত করেছে এবং সূচি তৈরি হয়ে গেছে। পরিস্থিতিটা তো আমি এই মুহূর্তে বলতে পারব না। তবে এই মুহূর্তে পুরো সফর আছে এবং এটা নিয়ে কোনো কথা আমি শুনিনি যে, সফর হবে না।’
‘আমি দুইবার আইসিসি মিটিংয়ে বিসিসিআইয়ের সচিব ছিল জয় শাহর সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছি। পরেরবার যখন তার সঙ্গে সভা করেছি, তখন সে আইসিসির চেয়ারম্যান হয়ে গেছে। তবে বিসিসিআইয়ে ভালো একটা প্রভাব তো আছে। নতুন যে সচিব, দেভাজিত সাইকিয়া, তার সঙ্গেও কথা বলেছি। আমার মনে হয়, এখনও সফর অন টাইম আছে। বাকিটা সময়ই বলে দেবে।’