ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ

সাগরিকার ৪ গোলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

সাগরিকার ৪ গোলে অপরাজিত  চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

এই নেপালের বিপক্ষেই লাল কার্ড দেখে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিলেন মোসাম্মৎ সাগরিকা। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ফিরেই পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করলেন এই ফরোয়ার্ড। তার আগুনে পারফরম্যান্সে পুরে ছারখার হলো নেপাল। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশ। গতকাল সোমবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় নেপালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রথমার্ধে এক গোল করার পর দ্বিতীয়ার্ধে আরও তিনটি গোল করেন সাগরিকা।

রাউন্ড রবিন পদ্ধতির সবশেষ ম্যাচে ড্র করলেই চলত বাংলাদেশের। তবে একপেশে দ্বৈরথে দুর্দান্ত নৈপুণ্যে নেপালকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। প্রথমার্ধে একবার জাল খুঁজে নেওয়া সাগরিকা দ্বিতীয়ার্ধে লক্ষ্যভেদ করেন আরও তিনবার। সব মিলিয়ে এবারের সাফে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ আটটি গোল তার।

২০১৮ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতাটি। খেলা হয়ে থাকে অনূর্ধ্ব-১৮ কিংবা অনূর্ধ্ব-১৯ কিংবা অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ে। এই নিয়ে ছয়টি আসরের পাঁচটিতেই চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ দল। ৬ ম্যাচের সবকটিতে জিতে পূর্ণ ১৮ পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ১২ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ নেপাল। তৃতীয় হওয়া ভুটানের অর্জন ৬ পয়েন্ট। তলানিতে থাকা শ্রীলঙ্কা খুলতে পারেনি পয়েন্টের খাতা। মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ৯টি পরিবর্তন এনে একাদশ সাজান বাংলাদেশের ব্রিটিশ কোচ বাটলার। জায়গা ধরে রাখেন শুধু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ম্যাচে খেলা ঐশী খাতুন ও পূজা দাস। সাগরিকা ছাড়া ফেরাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার, উমেহলা মারমা, মুনকি আক্তার, শান্তি মার্ডি ও স্বপ্না রানী।

ম্যাচ শুরুর আগে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন দুই দলের খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফরা। তখন উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করা হয়। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মেজাজে থাকা বাংলাদেশ ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই নেপালের গোলপোস্টে হানা দেয়। অনেকটা দৌড়ে ডানপ্রান্তে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফরোয়ার্ড সাগরিকা নেন কোণাকোণি শট। বল গোলরক্ষক সুজাতা তামাংয়ের গ্লাভসে লেগে বাইরে চলে যায়। এরপর টানা দুটি কর্নারে সুযোগ তৈরি করে স্বাগতিকরা। কিন্তু সম্ভাবনাগুলো অল্পের জন্য সফলতার মুখ দেখেনি। প্রথমে খুব কাছ থেকে উইঙ্গার শান্তি বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন। এরপর ফরোয়ার্ড মুনকির জোরাল শট চলে যায় ক্রসবারের বেশ উপর দিয়ে। পঞ্চম মিনিটে ভাগ্যের ফেরে গোল মেলেনি বাংলাদেশের। মিডফিল্ডার স্বপ্নার কর্নারে ছয় গজের বক্সের ভেতর থেকে হেড করেন সাগরিকা। গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল যাচ্ছিল জালের দিকে। একদম গোললাইন থেকে তা ফিরিয়ে দেন ডিফেন্ডার আনিশা রাই।

সেই হতাশা ঝেড়ে সাগরিকা দলকে উল্লাসে মাতান তিন মিনিট পর। মাঝমাঠ থেকে স্বপ্না দেন নিখুঁত থ্রু বল। তা ধরে গতিতে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে সাগরিকা চলে যান বক্সের কাছে। এরপর পোস্ট ছেড়ে অনেকখানি বেরিয়ে আসা সুজাতাকে কাটিয়ে গড়ানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন। এগিয়ে যায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ত্রয়োদশ মিনিটে সুযোগ আসে নেপালের সামনে। অনেক দূর থেকে নেওয়া আনিশার ফ্রি-কিক চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। ছয় মিনিট পর বড় বাঁচা বেঁচে যায় বাংলাদেশ। ডি-বক্সে প্রতিপক্ষের একটি ক্রস গোলরক্ষক মিলি আক্তার লুফে নিতে ব্যর্থ হন। এরপর পূর্ণিমা রাইয়ের শট বাধা পায় বামদিকের পোস্টে। ফিরতি বলে ফরোয়ার্ড শুকরিয়া মিয়ার হেড অবশ্য দক্ষতার সঙ্গে আটকে দেন মিলি।

ব্যবধান বাড়ানোর সম্ভাবনা বাংলাদেশ তৈরি করে দুই মিনিট পর। স্বপ্নার উঁচু করে বাড়ানো রক্ষণচেরা পাস ধরে বামপ্রান্ত থেকে শট নেন মুনকি। বল এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের গ্লাভসে লেগেও এগিয়ে যাচ্ছিল জালের পথে। শেষ মুহূর্তে কর্নারের বিনিময়ে নেপালকে বিপদ থেকে বাঁচান আনিশা। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, বল যখন সুজাতার গ্লাভস ছুঁয়েছিল, তখন তার অবস্থান ছিল ডি-বক্সের বাইরে। অর্থাৎ হ্যান্ডবলের দায়ে বড় সাজা পেতে পারতেন তিনি। তবে তাকে কোনো কার্ড দেখাননি রেফারি।

প্রথমার্ধের বাকি অংশে খেলার গতি একটু কমে আসে। ব্যবধান বাড়াতে না পারলেও রক্ষণ জমাট রেখে নেপালকেও গোল শোধ করতে দেয়নি বাংলাদেশ। ৪৪তম মিনিটে অবশ্য ডানপ্রান্তে উমেহলার থ্রু বলে সাগরিকা চলে যান বিপজ্জনক অবস্থায়। তবে শেষ ছোঁয়াটা দিতে পারেননি। ১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় পিটার বাটলারের দল।

দ্বিতীয়ার্ধেও স্বাগতিকদের দাপট চলতেই থাকে। গোল আসে আরও তিনটি। ৫১ মিনিটে অসাধারণ গোলে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেন সাগরিকা।

উমেলহা মারমার থ্রু পাস ডান পা দিয়ে ধরে চকিতে ঘুরে মার্কারকে বোকা বানিয়ে আগুয়ান গোলকিপারের পাশ দিয়ে নিখুঁত শটে স্কোর ২-০ করেন সাগরিকা। ৫৮ মিনিটে হ্যাটট্রিকও তুলে নেন তিনি। নিজেদের অর্ধ থেকে জয়নব বিবি রিতার লং বল ধরতে অফসাইড ফাঁদ ভেঙে এগিয়ে যান এই স্ট্রাইকার। বক্সের ঠিক বাইরে থেকে দেখে-শুনে ডান পায়ে চিপ করে আগুয়ান কিপারের মাথার ওপর দিয়ে জালে বল পাঠাতে ভুল করেননি তিনি। এটি এই আসরে সাগরিকার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। প্রথমটি করেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ৭৭ মিনিটেও ফের সাগরিকা ঝলক। মুনকি আক্তারের ক্রসে পাওয়া বল নিয়ে অসাধারণ এক শটে গোল করেন তিনি (৪-০)। শেষে এই ব্যবধানে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত