গত বছরের আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট এবং সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। দিন কয়েক আগে শ্রীলঙ্কার মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে টাইগাররা। ঐতিহাসিক সেই জয়ের রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি ইতিহাস গড়ার সুযোগ লিটন দাসদের সামনে। গত রোববার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচ জিতলে এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ জয় নিশ্চিত হবে স্বাগতিকদের। পাশাপাশি প্রথবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ।
অথচ সপ্তাহখানেক আগেও একের পর এক হতাশায় কাতর দলটির সামনে এখন টানা দুটি সিরিজ জয়ের হাতছানি। ব্যাটিং-বোলিংয়ে দাপুটে পারফরম্যান্সে অনায়াস জয়ে যাত্রা শুরুর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে এবার প্রথমবার সিরিজ জয়ের সুযোগ। বাকি দুই ম্যাচের একটি জিতলেই ট্রফি নিয়ে উল্লাসের সুযোগ পেয়ে যাবেন লিটন কুমার দাস, তাসকিন আহমেদরা।
অথচ ডাম্বুলায় গত রোববার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হওয়ার আগে টানা তিন সিরিজ হারের শঙ্কা জেঁকে বসেছিল বাংলাদেশ দলে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই ম্যাচ হারের পর পাকিস্তান সফরে গিয়েও হেরেছিল তারা। ভাগ্য বদলায়নি শ্রীলঙ্কা সফরের প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও। টানা ছয় ম্যাচ হেরে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয় লিটনের দল। এরপর ডাম্বুলায় ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। সেই ধারায় পরের ম্যাচ জিতে এখন আরেকটি সিরিজ জয়ের সুযোগ তৈরি করে ফেলেছে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচ জিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি জেতার ৯ বছরের অপেক্ষা ঘোচায় স্বাগতিকরা। ২০২৩ সালের এশিয়ান গেমসে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল তারা। কিন্তু সেই আসরে খেলেনি কোনো মূল দল। দীর্ঘ জয়খরা কাটিয়ে এবার লিটনের দলের সামনে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের সুযোগ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ‘প্রথম’ এরইমধ্যে করে ফেলেছে বাংলাদেশ। এর আগে দুই দলের একাধিক ম্যাচের তিনটি সিরিজে কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি তারা। ২০১৫ সালের জয় ছিল পাকিস্তানের ওই সফরের একমাত্র টি-টোয়েন্টি। ২০১৬ সালে তারা জেতে এশিয়া কাপে। চারবারের চেষ্টায় টি-টোয়েন্টি সিরিজের কোনো ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানোর পর সিরিজের ট্রফি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় ম্যাচে লড়বে স্বাগতিকরা। হেরে গেলেও সুযোগ থাকবে, তবে নিশ্চিতভাবেই অপেক্ষা করতে চাইবেন না লিটন, তাসকিনরা। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত মাত্র দুবার টানা একাধিক সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারায় তারা। ২০২২-২৩ সালে জেতে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাকি দুই ম্যাচের একটি জিততে পারলে নেতৃত্বের অর্জনে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর আরও কাছে চলে যাবেন লিটন। আগের চার সিরিজের দুটিতে ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। পঞ্চম সিরিজে তৃতীয় সাফল্যের সুযোগ তার সামনে। সাকিবের নেতৃত্বে ৭টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজের ৪টি জিতেছিল বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ দায়িত্বে বাংলাদেশের জয় ৪ সিরিজে। তবে তার এই সাফল্য ১১ সিরিজে অধিনায়কত্ব করে। চলতি বছরই সাকিব-মাহমুদউল্লাহর রেকর্ড ছোঁয়া কিংবা ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকছে লিটনের। অক্টোবর-নভেম্বরে বাংলাদেশে খেলতে আসবে আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অক্টোবরের শুরুতে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও একটি সিরিজ আয়োজনের আলোচনা করছে বিসিবি।
এসব অর্জন ও রেকর্ডের হাতছানি কাজে লাগাতে প্রয়োজন পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা। সিরিজ শুরুর আগে লিটন বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কা সফরের সাফল্যের ছন্দ ধরে রাখতে চান তারা। পাকিস্তানকে প্রথম ম্যাচ হারানোর পর সংবাদ সম্মেলনে একই কথা বলেন ৫৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতা পারভেজ হোসেন ইমন। ‘শ্রীলঙ্কা থেকে আমাদের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজটা খুব ভালো খেলে এসেছি। সবাই খুব আত্মবিশ্বাসী। চেষ্টা করেছি ওই আত্মবিশ্বাসটা ধরে রাখার। তো ওইভাবেই আমরা আজকে (গত রোববার) নেমেছি।’
গত মে মাসে পাকিস্তানের মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছে টাইগাররা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিং তোপে ১৯.৩ ওভারে মাত্র ১১০ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথমবার পাকিস্তানকে অলআউট করল বাংলাদেশ। তাসকিন ২২ রানে ৩টি ও মুস্তাফিজ ৬ রানে ২ উইকেট নেন। জবাবে ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনের হাফ-সেঞ্চুরিতে ২৭ বল বাকি থাকতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
মিরপুরের উইকেটে পাকিস্তানের ব্যাটাররা যেখানে সমস্যায় পড়েছে সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সফরকারী বোলারদের সামনে দাপটের সঙ্গে ব্যাট করেছেন ওপেনার পারভেজ। ৩৯ বলে ৫৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩ ম্যাচের লড়াইয়ে বাংলাদেশকে চতুর্থ জয় এনে দেন পারভেজ। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের তিন জয়ই এসেছে মিরপুরের ভেন্যুতে। তাই মিরপুরেই সিরিজ দ্বিতীয় ম্যাচ হওয়ায় জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই পরিকল্পনায় খেলার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস, ‘আমরা অবশ্যই উইকেট সম্পর্কে জানি কারণ মিরপুরে আমরা অনেক ক্রিকেট খেলেছি। ব্যাট করার জন্য এই উইকেট সহজ নয়। তবে আমরা যেভাবে ব্যাট করেছি, সেটি দুর্দান্ত ছিল।’