পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যকার সামরিক উত্তেজনা শুরুর পর থেকেই এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে শঙ্কা ছিল। এর মধ্যেই ঢাকায় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বৈঠকে ভারত যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় টুর্নামেন্টটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। তবে শেষমেশ অচলাবস্থা কিছুটা হলেও কেটেছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এসিসির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। বাংলাদেশে না আসলেও অনলাইনে এসিসির বৈঠকে যোগ দিয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ফলে এশিয়া কাপ নিয়ে অনিশ্চয়তার কালো মেঘও এখনও পুরোপুরি কাটেনি। সেটি নিয়ে চূড়ান্ত কিছু জানানো হয়নি।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ‘এশিয়া কাপ’ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে। চলবে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এবারের আসরের আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এই তথ্য জানিয়েছে। তবে সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, হঠাৎ করে আয়োজক দেশ পাল্টে গেছে। এবারের আসর অনুষ্ঠিত হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। যদিও এখনো টুর্নামেন্টের ভেন্যু ও শুরুর সময় নিয়ে এসিসির পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
শুরুতে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেয় তারা। তবে শেষ মুহূর্তে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে বিসিসিআই। সরাসরি উপস্থিত না থাকলেও ভার্চুয়ালি সভায় যুক্ত ছিল তারা। এতে করে এশিয়া কাপসহ অন্যান্য টুর্নামেন্ট আয়োজনে আশাবাদী হয়েছে এসিসি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় সংস্থাটির বার্ষিক সাধারণ সভা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সভা শেষে এসিসি সভাপতি মহসিন নাকভি স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন খুব শিগগিরই এশিয়া কাপ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে, ‘সমস্যাগুলো দ্রুতই সমাধান হবে এবং প্রতীক্ষিত এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হবে। আমরা এখন বিসিসিআইয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে আছি। আশা করি খুব শিগগিরই ঝুলে থাকা বিষয়গুলো সমাধান হয়ে যাবে এবং আমরা এশিয়া কাপ আয়োজন করতে পারবো।’ এজিএমে এসিসির ২৫টি সদস্য দেশই অংশ নেয়। তবে ভারতসহ বেশ কিছু দেশ জুমে মিটিংয়ে অংশ নেয়। বিষয়টি নিয়ে এসিসির সভাপতি বলেছেন, ‘আমাদের বার্ষিক সাধারণ সভা খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের ২৫ জন সদস্য রয়েছেন এবং সবাই সভায় অংশ নিয়েছেন। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই সব সদস্যদের যারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন এবং যারা জুমের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হয়েছেন।’
বিসিবি সভাপতি বুলবুলের প্রশংসা করে নাকভি বলেছেন, ‘বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই আমিনুল ভাইকে এবং বিসিবিকে, তাদের আতিথেয়তার জন্য। যেভাবে তারা আমাদের দেখভাল করেছেন, তা অভূতপূর্ব। এই দুই দিন ছিল দারুণ স্মরণীয়। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই এমন অসাধারণ আয়োজনের জন্য।’
এদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি বুলবুল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে আমি এসিসি ও এর চেয়ারম্যান মহসিন নাকভিকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, সভাটি অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সব সদস্য খুবই সহযোগিতাপূর্ণ ছিলেন, কারণ আমরা সবাই ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য কাজ করছি।’ সভায় আরও একবার জোর দিয়ে বলা হয় এসিসির অভ্যন্তরে কোনো রাজনীতি নয়, বরং সদস্য দেশগুলো কেবল ক্রিকেটের জন্য একযোগে কাজ করবে। নাকভির ভাষায়, ‘আমরা সবাই একমত হয়েছি যে, আমরা ক্রিকেটের জন্য কাজ করব। আমাদের কেউই চায় না রাজনৈতিক প্রভাব আমাদের সংগঠনে আসুক। এটি একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পরিবেশে অনুষ্ঠিত একটি সফল সভা ছিল।’ খুব শিগগিরই এশিয়া কাপ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন এসিসি সভাপতি। এবারের এশিয়া কাপে অংশ নেবে ৮ দল। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। এ ছাড়া টুর্নামেন্টে অংশ নেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও হংকং। ভেন্যু হিসেবে থাকছে দুবাই ও আবুধাবি। অবশ্য দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে ম্যাচ আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডস টুর্নামেন্টে ভারত চ্যাম্পিয়নস দল পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নসের বিপক্ষে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়, যার ফলে ম্যাচটি বাতিল হয়ে যায়। এ কারণেই অনেকে আশঙ্কা করছেন, এবারের এশিয়া কাপে হয়তো ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখা যাবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, ভারতের উচিত পাকিস্তানের বিপক্ষে না খেলা, আবার কেউ এই হাই-ভোল্টেজ ম্যাচের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। শেষ সিদ্ধান্তটি এখন বিসিসিআইয়ের হাতে।