
প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এবার আরেকটি ইতিহাস গড়ার সন্ধিক্ষণে লাল সবুজের মেয়েরা। টানা দুই জয়ের পর আজ এফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে শেষ ম্যাচে মাঠে নামছেন আফঈদা খন্দকাররা। প্রতিপক্ষ ‘অধিক’ শক্তিশালী দক্ষিণ কোরিয়া। অধিক এই কারণে যে, ফিফা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের (১০৪) চেয়ে তারা (২১) ৮৩ ধাপ এগিয়ে রয়েছে। তবে দুরন্ত বাংলাদেশও প্রস্তুত কেপপ দেশের মেয়েদের রুখে দিতে। ভিয়েনতিয়েনের লাও জাতীয় স্টেডিয়ামে আগামী শনিবার বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটায় শুরু হবে ম্যাচটি।
বাছাই পর্বে আট গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল সরাসরি চলে যাবে মূল পর্বে। বাকিদের মধ্য থেকে সেরা তিনটি রানার্সআপ দলও যাবে। এইচণ্ডগ্রুপে শক্তিশালী দক্ষিণ কোরিয়া রয়েছে বলেই আপাতত সেরা রানার্সআপ তিনটির একটিতে থাকতে চাইছেন আফঈদারা। আগেই দুই ম্যাচে অসম্ভব দক্ষতা দেখিয়ে জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক লাওসকে ৩-১ গোলে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে পূর্ব তিমুরকে ৮-০ গোলে হারিয়ে এখন গ্রুপের শীর্ষে কোচ পিটার বাটলারের শিষ্যরা। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার পয়েন্ট সমান ছয় করে। গোল পার্থক্যও সমান। তবে প্রতিপক্ষের জালে গোল দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে লাল সবুজের মেয়েরা। কোরিয়া তিমুরকে ৯-০ এবং লাওসকে ১-০ গোলে হারিয়েছে। তাই এক গোলে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
আজ দক্ষিণ কোরিয়াকে রুখে দিতে পারলেই কেল্লাফতে। বাংলাদেশই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে। কারণ টুর্নামেন্টের বাইলজ অনুযায়ী, একাধিক দলের সমান পয়েন্ট হলে হেড টু হেড বিবেচনায় আসবে। আজ ড্র হলে হেড টু হেড একই থাকছে। এরপর গ্রুপের মধ্যে গোল ব্যবধান সেটাও সমান। তখন বাইলজের ৭.২.২.৬ ধারা অনুযায়ী বেশি গোলের হিসাব হবে। বাংলাদেশ দুই ম্যাচে করেছে ১১ গোল আর কোরিয়া ১০। এই হিসাবে বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে।
সেরা রানার্সআপ দলের মধ্যেই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়বে বাংলাদেশ। কারণ আট গ্রুপের মধ্যে ডি গ্রুপ সেরা রানার্স আপের দৌড় থেকে এরইমধ্যে ছিটকে গেছে ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে কোনো একটি দেশ। কারণ এই গ্রুপে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা এই দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ৪। ভারত ও মায়ানমারে মধ্যে শেষ ম্যাচ।
ফলে এই গ্রুপের রানার্সআপ দলের ৬ পয়েন্ট হওয়ার সুযোগ নেই। যেখানে এরইমধ্যে ৬ পয়েন্টই রয়েছে পাঁচ দলের। ফলে ডি গ্রুপ বাদ দিয়ে অন্য সাত গ্রুপের মধ্যেই মূলত সেরা তিন রানার্স আপ হওয়ার লড়াই চলবে। বর্তমান পয়েন্ট টেবিল অনুযায়ী ৬ পয়েন্ট নিয়ে রানার্স আপ পজিশনে রয়েছে চাইনিজ তাইপে (সি গ্রুপ +৩), লেবানন (ই গ্রুপ +২), ইরান (এফ গ্রুপ +৫), জর্ডান (জি গ্রুপ +১১),দক্ষিণ কোরিয়া (এইচ গ্রুপ +১০)। গোল ব্যবধানে কোরিয়া ও জর্ডান খানিকটা সুবিধাজনক অবস্থানে। কোরিয়া জিতলে আর জটিল হিসেবে পড়তে হবে না। তবে বাংলাদেশকে তখন কঠিন সমীকরণে থাকতে হবে। তবে লাওস থেকে এক ভিডিও বার্তায় দলের ম্যানেজার মাহমুদা হক বলেন, ‘দলের সবাই সুস্থ’ আছে। দোয়া করবেন, যেন দেশের সবার জন্য একটি হাসি নিয়ে ফিরতে পারি।’
এদিকে স্বপ্ন পূরণের এত কাছে থেকেও পা মাটিতে রাখছেন বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার। তিনি বললেন, ‘আমাদের প্রতিপক্ষ এখন দক্ষিণ কোরিয়া, যারা দারুণ গোছানো ও মানসম্পন্ন দল। কাগজে-কলমে আমরা তাদের মানের নই। খেলার ফল যাই হোক, আমাদের সম্মান নিয়ে মাঠ ছাড়াটা গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু এখন আমাদের হাতে, সর্বোচ্চটা দেব আমরা।’
এরই মধ্যে সিনিয়র টিমের এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতাগুলোকে তাই শেখার মঞ্চ হিসেবে দেখতে চাওয়ার কথা একাধিকবার বলেছেন বাটলার। কোরিয়া ম্যাচ নিয়ে একই সুর এই ইংলিশ কোচের কণ্ঠে।
‘ম্যাচটা খেলার জন্য সবকিছুই আমাদের আছে। আমরা আমাদের সেরাটাই দিব। তবে, আমি স্রেফ মনে করি, কাজগুলো ঠিকঠাক করতে আমাদের কিছু বিষয় শিখতে হবে এবং আশা করি, সেটা আমরা শিখবও।