ঢাকা শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইউএস ওপেন

সাবালেঙ্কার কাছেই থাকল শিরোপা

সাবালেঙ্কার কাছেই থাকল শিরোপা

সময়টা ভালো যাচ্ছিল না আরিনা সাবালেঙ্কার। সাবেক প্রেমিক কনস্টানটাইন কলসভের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তবে নতুন প্রেমিকের অনুপ্রেরণায় আস্তে আস্তে নিজেকে ফেরার মিশনে তৈরি করে। তবুও অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে হেরেছিলেন সাবালেঙ্কা। হেরেছিলেন উইম্বলডনের সেমিফাইনালেও। অবশেষে নিজেকে ফিরে পেলেন তিনি। তবে ইউএস ওপেন নারী এককের ফাইনাল শুরুর আগে হঠাৎই আকাশ ভেঙে নামল বৃষ্টি। গত শনিবার রাতে আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের সংকোচনীয় ছাদ টেনে দেওয়া হলো। বৃষ্টি থামল এক পর্যায়ে। কিন্তু শুরু হলো ঝড়। না, প্রকৃতি আর অশান্ত হয়নি। কোর্টে ঝড় তুললেন আরিনা সাবালেঙ্কা। প্রথম সেট জিতে নিলেন তিনি দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। দ্বিতীয় সেটে অবশ্য লড়াই জমে উঠল। তবে অপ্রতিরোধ্য সাবালেঙ্কাকে থামানো গেল না। এ বছর দুটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে হেরে অবশেষে শিরোপার সুখে মাখামাখি হলেন তিনি বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামে। তার হাতে বাঘের ট্যাটু আঁকা আছে। নিজেকে তিনি ‘টাইগার’ পরিচয় দিতেই পছন্দ করেন। ফাইনালে সেই মানসিকতা মেলে ধরেই আমান্দা আনিসিমোভাকে ৬-৩, ৭-৬ (৩) গেমে হারিয়ে ইউএস ওপেনের শিরোপা ধরে রাখলেন সাবালেঙ্কা।

গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টে সাবালেঙ্কার শততম জয় এটি। বিশ্বের এক নম্বর তারকা মাইলফলকটি রাঙালেন কাঙ্ক্ষিত শিরোপায়। সেরেনা উইলিয়ামসের ১১ বছর পর কোনো খেলোয়াড় পিঠেপিঠি ইউএস ওপেন জিততে পারল। কিংবদন্তি সেরেনা টানা তিনবার ট্রফি জিতেছিলেন ২০১২-২০১৪ পর্যন্ত।

চ্যাম্পিয়ন হয়ে এই সময়ে হার্ড কোর্টের অবিসংবাদিত রানির খেতাবও ধরে রাখলেন সাবালেঙ্কা। বেলারুশের তারকার চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপাই হার্ড কোর্টে। ইউএস ওপেনে এই দুটি ট্রফির সঙ্গে আছে ২০২৩ ও ২০২৪ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফি। ২০২২ থেকে কোনো হার্ড কোর্ট আসরের ফাইনালের আগে থামেননি তিনি। ফাইনালে সাবালেঙ্কাই ছিলেন ফেভারিট। তবে চ্যালেঞ্জও তার কম ছিল না। গ্যালারির বেশির ভাগ অংশের সমর্থন অনুমিতভাবেই ছিল তার প্রতিপক্ষের প্রতি। আনিসিমোভার বাবা-মা রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এলেও তার জন্মণ্ডবেড়ে ওঠা নিউ জার্সিতে। আমেরিকানদের ঘরের মেয়েই তিনি। সমর্থন বেশি পাওয়াটা তাই স্বাভাবিক।

সাবালেঙ্কার চ্যালেঞ্জ ছিল নিজের কাছেও। এই বছর অস্ট্রেলিয়ান ও ফরাসি ওপেনের ফাইনালে উঠেও ট্রফির দেখা পাননি তিনি। উইম্বলডনের সেমিফাইনালে আটকে গেছেন এই আনিসিমোভার কাছেই হেরে। মানসিক একটা বাঁধা তাই ছিল তার। সব প্রতিবন্ধকতা টপকে জিতে গেলেন তিনি। জয়ের পর মেতে উঠলেন বাঁধনহারা উল্লাসে। ২৭ বছর বয়সি তারকা বললেন, তার মূল লড়াইটা ছিল নিজের সঙ্গে। ‘অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে হারার পর মনে হয়েছিল, এটি ভুলে গিয়ে সামনে তাকানোই হবে উপযুক্ত। কিন্তু ফরাসি ওপেনের ফাইনালেও একই কাজ হলো। এরপর মনে হলো, হয়তো পেছন ফিরে ওই ফাইনালগুলোয় তাকিয়ে কিছু শিক্ষা নেওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘এই ফাইনালে নামার আগে ঠিক করেছিলাম, নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখব আমি। ম্যাচে যা কিছুই হোক না কেন, আবেগে ডুবে যাব না। আমার মানসিকতা ছিল, কোর্টে নেমে প্রতিটি পয়েন্টের জন্য লড়াই করা। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, নিজের দিকে মনোযোগ রাখা এবং ম্যাচ জয়ের জন্য যা কিছু করা দরকার, সবকিছু করা।’ নিয়ন্ত্রণ যে সবসময় রাখতে পেরেছেন তিনি, তা নয়। ম্যাচ পয়েন্টে গিয়ে অতি উত্তেজনার বশেই কি না, স্ম্যাশ করতে গিয়ে গুবলেট পাকিয়ে ব্রেক উপহার দিয়ে বসেন আনিসিমোভাকে। তবে শেষ পর্যন্ত খেই হারাননি তিনি। আসল সময়েই নিজেকে শক্তভবে ধরে রাখেন রেকর্ড টানা ১৯তম টাইব্রেক জিতে। সেই সময়ে নিজেকে সামাল দেওয়ার গল্পও শোনালেন সাবালেঙ্কা।

‘একটা সময় নিয়ন্ত্রণ প্রায় হারাতে বসেছিলাম। তবে নিজেকে বলেছি, ‘নাহ, এটা হতে দেব না। সব ঠিকঠাক আছে।’ নিজেকে প্রায় হারিয়েই ফেলেছিলাম, কারণ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অমন ভুল করা যায় না। আমার অভিজ্ঞতা বলে, এসবের খেসারত দিতে হয়। তবে নিজেকে সামলেছি, গভীর একটা শ্বাস নিয়ে বলেছি, ‘ঠিক আছে, এরকম হতেই পারে। এখন এটা অতীত, পরেরটাতে মনোযোগ দেই।’ এভাবেই নিজেকে সামলেছি।’ বছরের আগের তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যামে কাছে গিয়েও ব্যর্থ হয়ে, এই আসরেও কঠিন পথ পেরিয়ে শিরোপা জিততে পেরেই সাফল্য বেশি মধুর লাগছে তার কাছে। ‘এই জয়টাতে মনে হয়েছে, অনেক কিছু পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত জিততে পেরেছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত