ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়

আমিনুল ইসলাম হুসাইনী
জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়

এই পৃথিবী মুমিনের আসল ঠিকানা নয়। মুমিনের আসল ঠিকানা জান্নাত। সেখানে রয়েছে প্রবাহমান ঝরনাধারা। ফুল ফলে আচ্ছাদিত বাগান। সবুজ বৃক্ষের ছায়াময় পরিবেশ। সেই জান্নাতই তাদের আপন আলোয়। পৃথিবীতে মুমিন আল্লাহর প্রতিনিধি। পুণ্যের চারা রোপণ করাই তাদের একমাত্র কাজ। যে যত বেশি পুণ্য করবে, তার জন্য জান্নাত তত বেশি সুসজ্জিত হবে। কিন্তু এই পৃথিবীতে আসার পর শয়তানের প্রবঞ্চনায় মুমিন তার কৃত ওয়াদা ভুলে যায়। জড়িয়ে পড়ে নানা পাপকাজে। তারা ভুলে যায়, সময় ফুরালেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে।

বোকা পথিক যেমন রঙিন প্রজাপতির পেছনে ছুঁটতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলে, তেমনি কোনো কোনো মুমিন বান্দা এই পৃথিবীর মোহ মায়ার মরীচিকার পেছনে ছুঁটতে গিয়ে জান্নাতের পথ হারিয়ে ফেলছে। জীবন সূর্য ডোবার আগেই যে বাড়ি ফেরার পাথেয় জোগাতে হবে, তাদের সেই খেয়ালই নেই। তারা এতটাই বেখেয়ালে হয়ে পড়েছে যে, নিজেদের রবকেই ভুলে বসে আছে। যে মহান রব তাদের মায়ের গর্ভে লালন পালন করেছেন। বিন্দু থেকে এত বড় মানুষে পরিণত করেছেন। মেধা-মস্তিষ্ক, শক্তি, সুস্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন। সুন্দর অবয়ব আর শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। তারা সেই রবের অবাধ্য হচ্ছে। এ জন্যই মুসলমান হওয়ার পরও তাদের স্থান সুখময় জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামে হবে। অবশ্য পরে কোনো এক সময় জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার পর জান্নাতে যাবে। মুমিন হয়েও কারা জাহান্নামে যাবে আর কখন তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, এখানে আলোচনা করা হলো-

নবীজির সুপারিশ

বিচার দিবসের কঠিন দিনে মানুষজন যখন একটু সুপারিশের জন্য এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে ব্যর্থ হয়ে ফিরবে, তখন নবীজি (সা.) গোনাহগার উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আমি তখন আল্লাহর আরশের নিচে এসে সিজদায় পড়ে কান্নাকাটি করতে থাকব। অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হবে, আপনি মাথা তুলুন। আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে। নবীজি মাথা তলে বলবেন, হে রব, আপনি আমার উম্মতকে ক্ষমা করুন। আল্লাহতায়ালা বলবেন, হে আমার প্রিয় নবী, আমার নিরপরাধ বান্দাদের জান্নাতের ডান দিকের দরজা দিয়ে প্রবেশ করান। অন্য দরজা দিয়েও ইচ্ছে করলে প্রবেশ করাতে পারেন।’ (বোখারি : ৪৭১২)।

হাশরের কঠিন দিনে আল্লাহতায়ালা নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর সুপারিশে যেমন গোনাহগার বান্দাদের ক্ষমা করবেন, তেমনি তাঁর আরও কিছু প্রিয় বান্দা যেমন কোরআনের হাফেজ, আলেম, শহিদ ও ফেরেশতাদের সুপারিশ করার সম্মান দান করবেন। তাদের সুপারিশেও এমন অনেক গোনাহগারদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে, যাদের ওপর জাহান্নাম অবধারিত ছিল। যেমন-

পুণ্যবান মুমিনদের সুপারিশ : হাদিসে এসেছে, পুণ্যবান মুমিনরা পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, আপনজনদের জান্নাতে নেওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালার কাশে সুপারিশ করবেন। এমনকি তারা গোনাহগারদের শাস্তি মওকুফের জন্য আল্লাহতায়ালার সঙ্গে তর্কও জুড়বেন। একপর্যায়ে আল্লাহতায়ালা তাদের সুপারিশ গ্রহণ করবেন এবং গোনাহগার মুমিনদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। আবু সাইদ খুদরি (রা) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দাবি নিয়ে দুনিয়াতে তোমাদের যেমন ঝগড়া হয়, তা মুমিনদের দ্বারা তাদের ভাইদের সম্পর্কে-যাদের জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে, তাদের রবের সঙ্গে ঝগড়ার চেয়ে বেশি কঠিন নয়।

নবীজি বলেন, ‘তারা বলবে, হে আমাদের রব, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সঙ্গে নামাজ আদায় করত, আমাদের সঙ্গে রোজা পালন করত ও আমাদের সঙ্গে হজ করত। কিন্তু আপনি তাদের জাহান্নামে প্রবেশ করিয়েছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ বলবেন; যাও তাদের থেকে যাকে তোমরা চেন, তাকে বের করো। তিনি বলেন, তারা পরিচিতজনদের কাছে আসবে। চেহারা দেখে তাদের তারা চিনবে। তাদের কাউকে আগুন পায়ের গোছার অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে। কাউকে পায়ের টাকনু পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে। তারা তাদের বের করে এনে বলবে, হে আমাদের রব, যাদের সম্পর্কে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আমরা তাদের বের করেছি। তিনি বলেন, আল্লাহ বলবেন, বের করো যার অন্তরে এক দিনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে। অতঃপর বলবেন, যার অন্তরে অর্ধেক দিনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে। এক সময় বলবেন, যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান রয়েছে।’ (নাসায়ি : ৫০১০)।

বিন্দু পরিমাণ ঈমান থাকার সৌভাগ্যে জাহান্নাম থেকে কোনো এক সময় পরিত্রাণ পাব, এই আশায় নেক আমল ছেড়ে দেওয়া, গোনাহের কাজে মজে থাকা মোটেও ঠিক হবে না। এক সময় জান্নাতে যাওয়ার চেয়ে প্রথমেই জান্নাতের মালিক হওয়াই কি শ্রেয় নয়? তাছাড়া এই পৃথিবীর সামান্য আগুনের তাপই যেখানে আমাদের সহ্যের বাইরে, সেখানে জাহান্নামের আগুনের তাপ কিভাবে সহ্য করব? একটু ভাবুন, সেই আগুন সহ্য করতে পারবেন? যদি না পারেন, তবে এখনই করুণাময় রবের পথে ফিরে আসুন। তাঁর কাছে ক্ষমা চান। আশ্রয় চান। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত