কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সমুদ্র সৈকতে ভেসে এলো একটি বিরল প্রজাতির মরা পরপইস। শুক্রবার সন্ধ্যায় সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে মরা পরপইসটি সৈকতে ভেসে আসে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার নাফি এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, একটি মৃত সামুদ্রিক প্রাণী ভেসে আসার খবর পেয়ে ঘটনাটি বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট-বোরি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। পাশাপাশি বনকর্মীদেরও অবহিত করা হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বোরির বিজ্ঞানী ও বনকর্মীরা এসে মৃত প্রাণীটি পরীক্ষা করেন এবং পরে মাটি চাপা দেন। তবে প্রাণীটির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনও বিজ্ঞানীদের কোন রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি একই পয়েন্ট সৈকতে একটি মৃত পরপইস ভেসে আসে। এরপর একই বছরের ৩ মার্চ টেকনাফের বাহারছড়া সৈকতে একটি এবং ১৩ অক্টোবর একই ইউনিয়নের হলবনিয়া সৈকতে দুটি পরপইস এর মৃতদেহ ভেসে আসে।
নিকট অতীতে কক্সবাজার উপকূলে পরপরইস এর দেখা মিলেনি বলে জানান বোরির সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোহাম্মদ শরীফ। তিনি বলেন, মরা পরপইসের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে বিজ্ঞানীরা।
বঙ্গোপসাগরে ইন্দো-প্যাসিফিক ফিনলেস পরপইস নামের একটি মাত্র প্রজাতির বিচরণ রয়েছে বলে জানান ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডাব্লিউসিএস) কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, সর্বশেষ জরীপ মতে বঙ্গোপসাগরে মোট ১৩ জাতের সিটাসিয়ান বা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র এক প্রজাতির পরপইস, ৮ প্রজাতির ডলফিন ও ৪ প্রজাতির তিমি রয়েছে। পরপইসের প্রাণীতাত্ত্বিক বা বৈজ্ঞানিক নাম নিওফোকেনা ফোকেনয়েডস।
বিজ্ঞানীরা জানান, পরপইস, ডলফিন ও তিমিসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিশাল পরিবেশগত সেবার কারণে এদেরকে ইকোসিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার বা বাস্তুসংস্থান প্রকৌশলী বলা হয়। এরা তাদের স্বভাবজাত বা আচরণগত প্রকৌশলের মাধ্যমে শুধু নিজেদের বসবাসের পরিবেশ ঠিক রাখেনা, অন্য প্রাণিদের জন্যও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেয়। যে কারণে, যে পরিবেশে এরা বসবাস করে সেই পরিবেশকে একটি উর্বর, জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ নির্মল পরিবেশ হিসাবে ধরা হয়।
২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে স্তন্যপায়ী ডলফিন, পরপইস ও তিমি সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। এগুলো শিকার করা, খাওয়া, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিবহণ ও ক্রয়-বিক্রয় করা দণ্ডনীয় অপরাধ।