নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, নার্স, সহায়ক কর্মী এবং আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। দীর্ঘ দুই দশকেও এই হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগ না হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সালে কবিরহাট উপজেলা গঠনের পর ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি, যা ২০১৭ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন এবং ৮০-৯০ জন ভর্তি থেকে সেবা নেন, অথচ মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে পুরো কার্যক্রম।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ৬০টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ১৬টি শুন্য এবং বাস্তব চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজন অন্তত ৫৭ জন নতুন জনবল। চিকিৎসক ১৪ জন প্রয়োজন হলেও রয়েছেন মাত্র ৩ জন। ফার্মাসিস্ট, নার্স, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সুইপার, অ্যাম্বুলেন্স চালক, মালি, অফিস সহকারী—প্রায় প্রতিটি স্তরেই জনবল সংকট চরম।
বিদ্যুৎ গেলে জেনারেটর চালানোর মতো জ্বালানি নেই, অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকায় তা অচল, ওষুধ সরবরাহ নেই বললেই চলে, আর আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও টেকনিশিয়ান না থাকায় তা অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এক্স-রে, ইসিজি কিংবা অপারেশন থিয়েটার—সবই অব্যবহৃত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে রোগীদের জন্য শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার চরম অভাব, বারান্দা ও মেঝেতে রোগীদের চিকিৎসা নিচ্ছে এমন দৃশ্য প্রতিদিনই দেখা যায়। রোগীরা অভিযোগ করছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে বাইরের ক্লিনিক ও ফার্মেসিতে গিয়ে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে, যা নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে কষ্টসাধ্য।
নরোত্তমপুর ইউনিয়নের নজির আহমদ বলেন, “ডাক্তারের দেওয়া টেস্ট সবই বাইরে করতে হয়। তাহলে এখানে আসার মানে কী?” আরেকজন রোগী জেসমিন আক্তার বলেন, “মেয়েকে বারান্দার মেঝেতে নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছি, ওষুধও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।”
কবিরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফজলুল হক বাকের জানান, “সুইপার ও মালি না থাকায় ময়লা পরিষ্কারে সমস্যা হচ্ছে। জনবল পেলে সেবা মান বাড়ানো সম্ভব।” উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শ্যামল কুমার দেবনাথ জানান, “সঙ্কটের মাঝেও আন্তরিকতার সাথে সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মরিয়ম সিমি বলেন, “জেলার প্রায় ৬০% জনবল শূন্য। কবিরহাটের জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে। নতুন নিয়োগে সমস্যা কিছুটা কমবে বলে আশা করছি।”