দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলার সঙ্গে ভারতের ১৪৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্তের শূন্যরেখায় বাংলাদেশের কয়েকশ একর জমিতে ইরি-বোরো মৌসুমে ইরি ধানের চাষ হয়েছে। ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা শূন্যরেখায় চাষ করা জমিতে এখন ইরি ধান পাকতে শুরু করেছে। কিছু কিছু জায়গায় ধান কাটা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
বর্তমানে ভারতীয় সীমান্ত শূন্যরেখায় বাংলাদেশি চাষিদের আবাদ করা ধান কাটতে বা মাড়াই করতে যেতে ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের চরম অবনতি বা যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ সীমান্তের চাষিরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
গত ২ মে দিনাজপুরের বিরল সীমান্তের ধর্মপুর ইউনিয়নের ধর্মজইন বিওপি ক্যাম্পসংলগ্ন মল্লিকপুর কাঁঠলিয়াপাড়ার ৩২০/৯ এস পিলারসংলগ্ন শূন্যরেখায় ধান কাটা ও মাড়াই করা অবস্থায় দুই বাংলাদেশি কৃষিশ্রমিককে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। বাংলাদেশি নাগরিকরা এর প্রতিবাদে দুই ভারতীয় নাগরিককে শূন্যরেখা থেকে আটক করে বিজিবির হাতে হস্তান্তর করেন। বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর দুই দেশের নাগরিকদের ফেরত আনা হয় ও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই সীমান্তঘেঁষা জেলার বোচাগঞ্জ, বিরল, দিনাজপুর সদর, চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর এবং হাকিমপুর সীমান্তবর্তী শূন্যরেখায় চাষিদের মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে চরম ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সব সময় ভয় ও ভীতির মধ্যে থাকতে হয় সীমান্তঘেঁষা গ্রামের মানুষের। বিজিবি সীমান্তের টহল জোরদার করেছে। পাশাপাশি সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলো বিশেষ করে শূন্যরেখায় বসবাসরত চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে বিজিবি।
দিনাজপুরের বিরলের ধর্মজইন কাঁঠালিয়াপাড়ার কৃষকরা বলেন, ‘শূন্যরেখায় আমার জমি রয়েছে। একই জমির আইলের এক পাশে ভারতের জমি, আরেক পাশে আমার জমি। সেই জমিতে ইরি ধান রোপণ করেছি। সেই ধান পেকে গিয়েছে। ধান কাটতে গিয়ে একটু আতঙ্ক মনে হচ্ছে। কারণ সম্প্রতি এই গ্রাম থেকেই দুজন কৃষিশ্রমিককে বিএসএফ ধরে নেওয়ার পর থেকে আমাদের মধ্যে একটু ভয় কাজ করছে।’
জমিতে ধান কাটতে আসা কৃষিশ্রমিকরা বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্তের শূন্যরেখায় যাওয়ার জন্য বিজিবি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা শূন্যরেখায় গিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছি। তারপরও আমাদের মধ্যে একটু ভয় কাজ করছে। কখন যে কী হয়?’
দিনাজপুরের বিরলের ধর্মজইন বিওপি ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার রেজাউল করিম বলেন, ‘সম্প্রতি ধর্মজইন বিওপি ক্যাম্পের অন্তর্ভুক্ত কাঁঠালিয়া গ্রামের দুই চাষিকে বিএসএফ ধরে নেওয়ার পর থেকেই এই গ্রামের মানুষের মধ্যে একটি ভয় কাজ করছে। আমরা চাষিদের সীমান্তে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে বলেছি। এখন যেহেতু দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে, তাই আমরা চাষিদের সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ শেষ করার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছি। গত ৮ মে তারিখে দিনাজপুরের বিরলে ব্রি ৮৮ ধান কাটা-মাড়াই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসা কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে। আমাদের চাষিরা শূন্যরেখায় যে ধান রোপণ করেছেন, সেই ধান কেটে নিয়ে আসবেন, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। আমরা যেন আমাদের দেশের আইন মেনে চলি এবং আমরা যেন আমাদের সীমান্তরেখা ক্রস না করি।’