বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুর বিভাগে গেজেটভুক্ত ৬৮ শহীদের মধ্যে এখনো মামলা করতে পারেনি ১০ শহীদ পরিবার। পুলিশের অসহযোগিতা এবং আওয়ামী নেতাকর্মীদের ভয়ে মামলা করতে পারেনি বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর। সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিলে গত দুদিনে নতুন মামলা হয়েছে ১০টি, যা নিয়ে বিভাগটিতে সর্বমোট মামলা হয়েছে ৫৮টি।
জানা যায়, যেসব শহীদ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ও যোগাযোগ ভালো ছিল, তারা আন্দোলনের সময় মামলা করেছিল। কিন্তু অনেক পরিবার মামলা করেনি ভয়ভীতির কারণে। শেখ হাসিনা পালানোর পরও আসামিদের জামিন এবং আবু সাঈদের মামলাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় মামলা করতে অনাগ্রহ ছিল শহীদ পরিবারগুলোর মধ্যে। তবে সম্প্রতি মামলা করছেন ভুক্তভোগীরা।
সূত্র আরও জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে রংপুর বিভাগে আবু সাঈদসহ ৬৮ জন শহীদ হন। এর মধ্যে রংপুর রেঞ্জে ৬১ ও মেট্রোতে সাতজন। আহত হন এক হাজার ৪৮০ জন। এ সব হতাহতের ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার হন তিন হাজার ৬৭৪ জন। যাদের অনেকেই জামিন নিয়ে বের হয়ে এসেছেন।
শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুলিতে নিহত হওয়ার পরও অনেককে গোপনে কবরস্থ করা হয়েছে। ওই সময় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। পুলিশের পাশাপাশি তৎকালীন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের মামলা না করতে ভয়ভীতি দেখাতো। তবে এখন পুলিশের পক্ষ থেকে মামলাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করায় নতুন করে আহত ও শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হচ্ছে।
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বলেন, শহীদ পরিবার ছাড়াও নানা আন্দোলনে আহত হয়েছেন, তাদেরও মামলা করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। পানায় মামলা করলে পুলিশের পক্ষ থেকে বাদীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের অতিরিক্ত দুই ডিআইজি জানান, রংপুর রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটন থানাগুলোতে শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে যে মামলাগুলো হয়েছে, তাতে অনেক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সরকারি আমলাদের নাম রয়েছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে আবু সাঈদের মামলা ছাড়া অন্য কারো মামলায় পুলিশের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সরকারি কোনো আমলাকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি।
রংপুর মেট্রোর পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) মজিদ আলী বলেন, রংপুর মহানগরীতে ৭ শহীদ পরিবারের মধ্য থেকে ৭ পরিবার মামলা করেছে।
এ বিষয়ে রংপুর জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এড বায়েজিদ ওসমানী জানান, জুলাই মামলাগুলোতে আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিচ্ছেন তবে আওয়ামী লীগসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের নামে অন্যান্য যে মামলা রয়েছে সেগুলোর আসামিরা নিম্ন আদালত থেকে জামিন পাচ্ছেন। জামিনে বাইরে এসে তার বাদী ও সাক্ষীদের হুমকি দেওয়ায় অনেকে মামলা করার সাহস পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
জামায়াতে ইসলামী রংপুর জেলা শাখার সাবেক আমির বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মাহবুবার রহমান বেলাল জানান, মামলাগুলো অনেক আগে করা উচিত ছিল।