ভূমি সংক্রান্ত জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সেবার ডিজিটালাইজেশন এবং নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের গুরুত্ব তুলে ধরতে রংপুরে আয়োজন করা হয়েছে ‘ভূমি মেলা ২০২৫’।
রোববার সকালে রংপুর বিভাগীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা।
এ বছরের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ছিল—“নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করি, নিজের জমি সুরক্ষিত রাখি”—যা কর প্রদানে স্বচ্ছতা, জমির নিরাপত্তা এবং ভূমি ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বার্তা বহন করে।
মেলার শুরুতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়, যা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। র্যালিতে অংশ নেন সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, নারী উদ্যোক্তা, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ। ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও দেশাত্মবোধক স্লোগানে মুখরিত র্যালিটি ছিল প্রাণবন্ত ও জনসচেতনতামূলক।
র্যালি শেষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “নাগরিকদের কর প্রদানের অভ্যাস গড়ে না উঠলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এখন ঘরে বসেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ভূমি কর পরিশোধের সুযোগ রয়েছে, সবাইকে এ বিষয়ে জানতে হবে।”
বিশেষ অতিথি রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বলেন, “ভূমি সংক্রান্ত প্রতারণা রোধে সবার আগে প্রয়োজন নিয়মিত হালনাগাদ ও ভূমি কর পরিশোধ।”
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মজিদ আলী এবং জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সালও বক্তব্যে ভূমি ব্যবস্থায় ডিজিটাল সেবা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে এই মেলার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
মেলায় ভূমি অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, ডিজিটাল ভূমি সেবা কেন্দ্র, রাজস্ব বিভাগসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় ১৫টি স্টল স্থান পায়। দর্শনার্থীরা সরাসরি হাতে-কলমে জেনেছেন অনলাইনে ভূমি কর প্রদান, নামজারি আবেদন, রেকর্ড যাচাই, ডিজিটাল নকশা দেখা এবং জমির মালিকানা নিশ্চিতকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভূমি বিষয়ে সচেতন করতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় আলাদা সচেতনতামূলক সেশন, কুইজ প্রতিযোগিতা ও প্যাম্পলেট বিতরণ। তারা “ভূমি কর দিব, দেশ গড়ব” স্লোগানে অংশ নেয় র্যালি ও আলোচনা সভায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত ভূমি কর প্রদান সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যক্তি জমির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক। হালনাগাদ রেকর্ড ও স্বচ্ছ তথ্য থাকলে জমি সংক্রান্ত জটিলতা ও প্রতারণা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
ভূমি মেলার মতো আয়োজনকে দেশের অন্যান্য জেলায় সম্প্রসারণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
রংপুরের ‘ভূমি মেলা ২০২৫’ কেবল একটি আনুষ্ঠানিক আয়োজন নয়—বরং এটি নাগরিকদের ভূমি-সচেতনতা তৈরির একটি বাস্তবমুখী ও কার্যকর পদক্ষেপ। ডিজিটাল ভূমি সেবা ও কর প্রদানের অভ্যাস গড়তে এ ধরনের উদ্যোগ সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়।