জাতীয় বাজেটে অবহেলিত রংপুর অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে গণসংহতি আন্দোলন। মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর ১৬ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করে সংগঠনটি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলন রংপুর জেলা আহ্বায়ক তৌহিদুর রহমান। বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব মোফাখখারুল মুন, সংগঠক আব্দুল জব্বার সরকার, প্রত্যয় মিজানসহ আরও অনেকে।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার রংপুরের উন্নয়নের নামে ভোট নিয়ে প্রতারণা করেছে। দক্ষিণাঞ্চলে একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও রংপুর থেকেছে বৈষম্যের শিকার। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও সেই বৈষম্যই বহন করছে।”
তারা আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা রংপুর সফরে এ অঞ্চলকে দেশের এক নম্বর জেলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেও গত নয় মাসে একনেকে রংপুরের জন্য একটি প্রকল্পও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এমনকি উপদেষ্টা পরিষদেও রংপুর থেকে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।”
স্মারকলিপিতে উত্থাপিত ১৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে: আগামী বাজেটে রংপুরের চিনিকল, ধান-চালের সাইলো, হিমাগারসহ কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলবে বরাদ্দ দেয়া, অন্য সিটি কর্পোরেশনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সক্ষমতা ও সেবার মান বাড়াতে উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়ানো, শ্যামাসুন্দরী খালের প্রবাহ স্বাভাবিক, প্রকৃতিবান্ধব ও বহুমুখী ব্যবহারের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া, কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি, আধুনিকায়ন, সেবার মানবৃদ্ধি, রোগীবান্ধব ব্যবস্থাপনার জন্য বরাদ্দ দেয়া এবং রোগীদের সেবা ত্বরান্বিত করতে সদর হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া, রংপুর রেলের উন্নয়ন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবৃত্তি, গবেষণা বাড়াতে বরাদ্দ দেয়া, সদর উপজেলায় অন্তত একটি কলেজ জাতীয়করণ করা, রংপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে বরাদ্দ দেয়া, শিল্প বাণিজ্যের প্রসারে রংপুরে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করা, রংপুর সদরে বিশেষায়িত মাতৃ ও শিশু হাসপাতাল চালু করতে প্রয়োজনীয় জনবল ও বরাদ্দ প্রদান, আলু সংরক্ষণের জন্য সরকারি হিমাগার ও প্রান্তিক চাষিদের জন্য সমবায় ভিত্তিক হিমাগার অথবা সংরক্ষণাগার স্থাপনে বরাদ্দ দেয়া।
এছাড়া, রংপুরের শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্য-ইতিহাস চর্চা ও গবেষণা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, চর্চাকেন্দ্র নির্মাণ ও সকল কলাকুশলীদের আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, গণগ্রন্থাগারে দলীয় প্রভাবমুক্ত নতুন-পুরাতন বই, দেশী-বিদেশে পত্রিকা, গবেষণা, ডকুমেন্টস, সিনেমা, অনুবাদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো, গণঅভ্যুত্থানে শহীদের নামফলক স্থাপনসহ জুলাই স্মৃতি সংরক্ষণাগার নির্মাণ, ক্রীড়াঙ্গনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ বাড়াতে ক্রীড়াসামগ্রী, প্রতিযোগিতা আয়োজন, ফিটনেস ট্রেনিংয়ে যথাযথ বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানানো হয় স্মারকলিপি।
সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেন।