রংপুর অঞ্চলে অসম্ভব জনপ্রিয় ও সুস্বাদু বৈরালি মাছ আবারও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে তিস্তা নদীতে। দীর্ঘদিন পর মাছটির প্রাচুর্য ফিরে আসায় খুশি জেলে, বিক্রেতা ও ভোজনরসিক ক্রেতারা।
শনিবার (৩১ মে) তিস্তা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে বৈরালি মাছ শিকার করছেন। আগে যেখানে মাছটি প্রায় বিলুপ্তির পথে ছিল, এখন তা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে মাছটি আকারভেদে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তিস্তাপারের জেলেরা জানান, তিস্তা নদী থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছিল বৈরালি মাছ। তিন-চার বছর থেকে তিস্তায় পানি কম আসার কারণে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সুস্বাদু এই মাছটি জেলেদের জালে ধরা পড়ছিল না।
রংপুর অঞ্চলে অসম্ভব জনপ্রিয় সুস্বাদু বৈরালি মাছের যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল- এবারে প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় তা অনেকটাই কেটে গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উজানে ভারতের একাধিক জায়গায় বাঁধ দেওয়ার ফলে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীতে পানি ও স্রোত কমে যায়। ফলে বৈরালি মাছের বংশবৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে। আবার যখন নদীতে ঘোলা পানি আসে তখন বৈরালি মাছও গভীর পানিতে হারিয়ে যায়।
তিস্তাপারের নাজিরদহ চরের জেলে কবীর হোসেন (৪০) জানান, নদীর পানি কমে যাওয়ায় মাছও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছিল না।কয়েকদিন ধরে উজানের জোয়ারে নদীতে স্বচ্ছ পানি আসার পর ভরে গেছে বৈরালি মাছ।স্থানীয়ভাবে মাছটি বৈরালি নামে পরিচিত হলেও বৈজ্ঞানিক নাম-বারিলিয়াস বারিলা (Barilius barila)। এ মাছটির গায়ের রং সাদা তবে বুকের নিচে হলুদ বর্ণ ধারণ করলে মাছটি পরিপক্ব হয়ে ওঠে অর্থাৎ স্বাদ বেড়ে যায়।
কাউনিয়ার চর নাজিরদহ, ঠিকানার হাট, শহীদবাগ, তিস্তা সড়ক ও রেলসেতু পাড়, টেপামধুপুরের চরগনাই, ঢুষমারা, তালুকশাহবাজ গ্রামের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে- আকার ভেদে বৈরালি মাছ ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বৈরালি মাছের পাশাপাশি বালিয়া, চিংড়ি, চেলা, ঢেলা, টোরা, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, দারকাসহ নানা মিশালি মাছ প্রচুর ধরা পড়ছে। এতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে খুশি
শনিবার বিকেলে রংপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: হারুন আর রশিদ জানান, তিস্তা নদীতে বৈরালি মাছের প্রাচুর্য দেখা দেওয়ার পেছনে আমাদের নিয়মিত তদারকি, কারেন্ট জাল জব্দ, পোনামাছ শিকার বন্ধে উদ্যোগ এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম ভূমিকা রেখেছে। ফলে মাছগুলো ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। উজানের জোয়ারে নদীতে স্বচ্ছ পানি আসার পর ভরে গেছে বৈরালি মাছ। স্থানীয়রা প্রচুর মাছ শিকার করতে পারছে ।
তিনি আর ও বলেন, বৈরালি মাছের পাশাপাশি বালিয়া, চিংড়ি, চেলা, ঢেলা, টোরা, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, দারকাসহ নানা মিশালি মাছ প্রচুর ধরা পড়ছে । সকলে সহযোগিতায় পোনা মাছ শিকার করা বন্ধ হলে প্রচুর মাছ পাওয়া যাবে ।