শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বজ্রপাত নিরোধসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তালের চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলার বিভিন্ন কৃষক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে বিনামূল্যে তালের চারা ও বেড়া বিতরণের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টকারী আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ধ্বংস কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে।
বুধবার (১ জুলাই) কৃষি অধিদপ্তরের উদ্যোগে উপজেলা কৃষি অফিসের সামনে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় উপজেলায় ৩৫০টি তালের চারা ও প্রতিটি চারার জন্য একটি করে বেড়া বিতরণ করা হবে। তবে উদ্বোধনীর দিন ১০০টি চারা ও বেড়া বিতরণ করা হয়েছে।
এসময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মশিউর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মওদুদ আহমেদ ও কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম খান, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান ইমরানসহ বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের কৃষকগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন ব্লকে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ, কৃষি অফিসে কর্মরত বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন নার্সারির মালিক ও স্থানীয় গাছের চারা ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রাকৃতিক উপায়ে বজ্রপাত নিরোধসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাল গাছ রোপণের বিকল্প নেই। বজ্রপাত নিরোধে তাল গাছের সুফল পেয়েছে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। এছাড়াও তালের পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, হাতপাখা, চাটাই ও মাদুর তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর কান্ড দিয়ে বাড়ি ও ডিঙি নৌকা তৈরি হয়। তালের ফল ও শাঁস পুষ্টিকর খাদ্য। তালের রস থেকে গুড়, পাটালি ও মিছরি ইত্যাদি তৈরি হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গাছ। দীর্ঘজীবী তাল গাছ প্রায় একশ’ বছর বাঁচে। তাই দীর্ঘ মেয়াদি বজ্রপাত নিরোধসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেশি বেশি তালগাছ রোপণ একটি ফলপ্রসূ উপায়।’
তালের চারা ও বেড়া বিতরণের পরে, একই স্থানে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টকারী আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ধ্বংসকল্পে বেসরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারি মালিকদের চারা ক্ষতিপূরণ কর্মসূচির আওতায় ক্ষতিকর আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ধ্বংস কর্মসূচি উদ্বোধন করেন ইউএনও ফারজানা আক্তার ববি।
এসময় আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের ক্ষতিকর দিকসমূহ তুলে ধরে ইউএনও ফারজানা আক্তার ববিসহ অন্যান্য বক্তারা জানান, আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা সহজে পচে না ফলে মাটিতে জৈবপদার্থ সঞ্চয়ের হার কমে এবং জমির জলধারণ ক্ষমতা ও উর্বরতা কমে যায়। এসব গাছ অন্যান্য গাছের তুলনায় অনেক বেশি পানি টেনে নেয়, ফলে অন্য গাছ ও ফসলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে; এমনকি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নেমে যায়। এছাড়া আকাশমণি সাধারণত ঘনবসতিতে জন্মায় এবং অন্য উদ্ভিদের জন্য পর্যাপ্ত আলো ও স্থান না থাকায় জীববৈচিত্র হ্রাস পায়। এই গাছের পাতায় থাকা রাসায়নিক পদার্থ অন্যান্য গাছের বীজ অঙ্কুরোদ্গমে বাধার সৃষ্টি করে। গাছটি খুব দ্রুত জ্বলে ওঠে, ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়ে। ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা ও শিকড় থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ আশেপাশের অন্যান্য উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। অতিরিক্ত ইউক্যালিপটাস বনায়ন এলাকার আর্দ্রতা ও স্থানীয় জলবায়ু পরিবর্তন করে দিতে পারে। এটি একজাতীয় বন তৈরি করে, যা প্রাণী ও অন্যান্য উদ্ভিদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। তাই যেকোনো ক্ষতিকর গাছের চারা রোপণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন তারা।