ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দেবহাটায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে অচল জনজীবন, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

দেবহাটায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে অচল জনজীবন, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

দেবহাটাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গত এক সপ্তাহের বেশি একটানা চলা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়াসহ মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা তীব্র আকার ধারণ করেছে ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। একাধিক স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অনেকের বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় রান্না বান্নায় হিমশিম খেতে হচ্ছে গৃহিণীদের। টয়লেট ব্যবস্থাসহ সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া উপজেলার বহু জায়গায় ফসলি জমি ও একাধিক মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে।

জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে চলা রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। মাঝখানে দুইদিন বিরতির পর গত রবিবার বিকেল থেকে আবারো বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বিরামহীন এই বৃষ্টি কখনো জোরেসোরে আবার কখনো গুড়িগুড়ি। একঘেয়েমি বৃষ্টিপাতে বিশেষ দরকার ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ভ্যান, ইজিবাইক,ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকসহ সাধারণ শ্রমজীবীরা বের হলেও তাদের উপার্জন নেই বললেই চলে। অনেক শ্রমজীবীরা বেকার সময় পার করছেন। জনজীবন যেন থমকে পড়েছে। দোকানপাট খোলা থাকলেও অনেকটা ক্রেতা শূন্য।

ভ্যানচালক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির মধ্যে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছি এখন বিকেল হয়ে গেছে। একজন যাত্রীও ভ্যানে ওঠেনি। একটি টাকাও কামাই হয়নি। অভাবের সংসার। বাজার করবো কি দিয়ে। একই কথা বললেন, সখিপুরের আলাউদ্দিন ও ইজিবাইক চালক উপজেলা সদরের হাসান।

এদিকে, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে কুলিয়া, পারুলিয়া ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান মঙ্গলবার খালের নেট, পাটা ও জাল অপসারণে অভিযান পরিচালনা করেন। ওইসব এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে আছে। বাসা বাড়িতে পানি ঢুকেছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উঠে গেছে পানি। টিউবওয়েল ডুবে গেছে। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন খাত। চলছে না চুলা।

এসব এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবছর বর্ষাকালে একই অবস্থা হয়। কিন্তু পানি সরানোর কোন ব্যবস্থা হয় না। বছরের প্রায় তিন চার মাস আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এজন্য তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য দায়ী করেছেন। অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি বানানো, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ও যত্রতত্র বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করায় জলাবদ্ধতার এই দূর্দশায় ভুগতে হয় সাধারণ নাগরিকদের।

দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতার খবর পেয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া অনেক এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এলাকাবাসীদের সহযোগিতায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে আসাদুজ্জামান জানান।

তিনি আরো বলেন, অবিরাম বর্ষণের ফলে ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের কিছু জায়গায় ভাঙ্গনের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঐসব এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত বেড়িবাধ সংস্কারে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

দেবহাটা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বকুল জানান, ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছিল। তিনি সেসব স্থানে গিয়ে এলাকার মানুষদের সাথে নিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছেন।

দেবহাটা উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের মেরিন ফিশারিজ অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অতি বৃষ্টির ফলে উপজেলার আনুমানিক ৯০ থেকে ১০০ হেক্টর ঘের ডুবে গেছে।

এছাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান জানিয়েছেন, বর্তমানে কোন ধানচাষ না হওয়ায় আবাদি জমির তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে সবজি ক্ষেতগুলো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।

তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী আগামীকাল থেকে বৃষ্টিপাত কমে যেতে পারে বলে জানা গেছে।

টানা বৃষ্টি,নিম্নাঞ্চল,প্লাবিত
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত