পাবনার ঈশ্বরদীর লক্ষ্ণীকুণ্ডা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদার ভাগ নেওয়া, অপরাধে সহায়তা ও অর্থের বিনিময়ে নিরাপত্তা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি হাতে লেখা তালিকা ও গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) নাটোরের লালপুর উপজেলার মোল্লাপাড়া চরে সেনাবাহিনীর একটি টিম অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদক, দেশীয় অস্ত্র ও নগদ টাকাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— আশরাফুল ইসলাম বাপ্পি (২৮), মেহফুজ হক সোহাগ (৩৯) এবং মোছাম্মৎ রোকেয়া (৫৫)। অভিযানের পর ফেসবুকে ভাইরাল হয় একটি খাতার ছবি, যাতে প্রতিদিন, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়ার বিস্তারিত তালিকা রয়েছে।
খাতার তালিকা ও ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, নৌ পুলিশের টহল টিমকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। এছাড়াও নদীতে চলাচলকারী প্রতিটি নৌকা থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে তা থেকেও ভাগ যেতো নৌ পুলিশকে। দিনে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০টি নৌকা চলাচল করে, ফলে মাসে নৌ পুলিশকে দেওয়া টাকার অংক দাঁড়ায় প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।
নৌ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তারা এসব অপরাধীচক্রকে আইনের আওতায় না এনে বরং অর্থের বিনিময়ে নিরাপদ চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা ভিডিওতে এই বিষয়গুলো স্বীকারও করেছেন বলে জানা গেছে।
লক্ষ্ণীকুণ্ডা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফিরোজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগ দিয়েছি। এসব ঘটনা আমার আগমনের আগের।’ তবে, ভাইরাল তালিকায় তার দায়িত্বকালীন সময়েও লেনদেনের উল্লেখ রয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তালিকা আমি দেখেছি, তবে এসব তথ্য সঠিক নয়।’ এরপর তিনি ফোন রেখে দেন।
ভাইরাল হওয়া তালিকায় শুধু নৌ পুলিশ নয়, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সাংবাদিকদেরও চাঁদার ভাগ দেওয়ার উল্লেখ রয়েছে। দুই খণ্ড খাতায় লেখা এই তথ্যগুলোতে প্রতিটি ব্যক্তির নাম, কত টাকা দেওয়া হয়েছে এবং কোন তারিখে দেওয়া হয়েছে তাও উল্লেখ রয়েছে।