
স্বাদে-গন্ধে পুষ্টিমানে ভরপুর অতিথি আপ্যায়নে ঐতিহ্যের ছোঁয়া, কৃষকের কাঁচা সোনা এবং এটি একটি বৃহৎ আকারের ফল যা গাছের কাণ্ড এবং শাখা থেকে সরাসরি উৎপন্ন হয়। কাঁঠাল সাধারণত কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। কাঁঠাল এক প্রকার হলুদ রঙের জাতীয় ফল।
এবার কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড় ঝাপটার আঁচ না লাগায় কাঁঠাল ভালো হয়েছে। কাঁঠালের এলাকা হিসেবে পরিচিত পাবনার ঈশ্বরদীর জয়নগরে প্রতিটি বাগান, বাড়ি ও রাস্তার পাশে গাছে-গাছে ঝুলছে জনপ্রিয় ফল কাঁঠাল।
উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট পাবনার ঈশ্বরদীর জয়নগর বোডঘর মোড় কাঁঠালের হাটে একদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌসুমি ফল কাঁঠাল বিক্রেতারা কাঁঠাল বিক্রি করতে আসেন। উপজেলার সলিমপুর, সাহাপুর, লক্ষীকুন্ডা, পাকশী ও দাশুড়িয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার কাঁঠাল বাগান এখন ফলে ভরপুর। এবছরও মৌসুমের শুরুতে কাঁঠাল বিক্রির জন্য উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর বোর্ড অফিস মোড়ে প্রতিদিন বসছে এ অঞ্চলের কাঁঠালের সবচেয়ে বড় হাট। তবে কাঁঠালের ভালো দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা।
সরজমিনে দেখা যায়, বেলা ১২টার পর, থেকেই পাবনা,রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, যশোর সহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা ও ঈশ্বরদী উপজেলার উৎপাদিত কাঁঠালসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে রিকশা-ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং স্টিয়ারিং গাড়িতে করে প্রচুর কাঁঠাল বিক্রি করতে আনা হচ্ছে জয়নগর বোর্ড অফিস মোড়ের এ হাটে। আবার অন্যদিকে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পাইকারি ব্যবসায়ীরা পাইকারি দামে কাঁঠাল কিনতে আসছেন এ হাটে। বিশাল জায়গাজুড়ে কাঁঠালের পাইকারি বাজার বসেছে। বাজারে বড় বড় আড়তদারের কাছ থেকে পাইকারি দরে কাঁঠাল কিনে সেগুলো ট্রাকে তুলছেন ক্রেতারা। অন্য দিকে সড়কের পাশে শত শত ভ্যানগাড়িতে কাঁঠাল ভর্তি করে বিক্রির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। একেকটি ভ্যানগাড়িতে মাঝারি আকারের ২০ থেকে ৫০টি কাঁঠাল। বড় পাইকাররা ভ্যানগাড়িতে থাকা কাঁঠালগুলোর আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করে দর কষাকষি করছেন। প্রতি গাড়িতে ( ট্রাকে ) ১২০০-১৫০০ পিস কাঁঠাল সরবরাহ করা যায়। চলতি বছরে এ হাটে প্রতি পিস কাঁঠাল ৫০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় কাঁঠাল বাগানের মালিক রবিউল আলম বলেন, দুই থেকে তিন মাস কাঁঠালের ভরা মৌসুম। কাঁঠাল চাষ করে আয়কৃত অর্থ দিয়ে সারা বছর পরিবারের খরচ চালায়। এ বছর কাঁঠালের মোচা আসার সময় বৃষ্টিপাত কম ছিল। এজন্য অনেক মোচা নষ্ট হয়েছে।
জয়নগর বোর্ড অফিস মোড়ের বাপ্পি ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী আবুর আলী জানান, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র তিন মাস এ অঞ্চলে কাঁঠাল পাওয়া যায়। তার আড়ত থেকে প্রতিদিন ৪-৫ টি ট্রাকযোগে বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, আমতলী, গলাচিপা, বাকেরগঞ্জ, খুলনা সহ বিভিন্ন জেলায় কাঁঠাল সরবরাহ করা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজন জানান, প্রতিদিন বাগান থেকে ১০০-১৫০ পিস কাঁঠাল নিয়ে এ হাটে আসি। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ হাটে কাঁঠাল আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কম। বিশ্বাস কাঁঠালের আড়ত এর স্বত্বাধিকারী মিনারুল বিশ্বাস বলেন, স্থানীয় চাষি ছাড়াও বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা কাঁঠাল বিক্রি করতে এ হাটে আসেন। তার আড়ত থেকে নোয়াখালী, সিলেট, পটুয়াখালী সহ বিভিন্ন জেলায় কাঁঠাল সরবরাহ করা হয়।
পুষ্টিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলেন, কাঁঠাল পুষ্টি সমৃদ্ধ। এতে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিংক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী।
কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ নিতান্ত কম। এ ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও কম।
কাঁঠাল পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: আব্দুল মমিন জানান, চলতি বছরে উপজেলায় ১৫৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয়েছে। কাঁঠাল চাষে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয় ।