
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলার অভিযোগে পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় এবং যথাযথ চিকিৎসা না দেওয়ায় এ দুটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে একজন হলেন ফুলবাবু দাস (১৮), তিনি উলিপুর উপজেলার পূর্ব নাওড়া গ্রামের বাসিন্দা। গত ৩০ জুলাই রাতে শ্বাসকষ্ট ও রক্তক্ষরণ নিয়ে তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রায় এক ঘণ্টা পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক বা নার্স তার পাশে আসেননি। পরে রাত ১১টার দিকে ফুলবাবু মারা যান।
এর আগে, গত ২৫ জুলাই রাতে পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা জামাল বাদশাহ (৫৫) নামে আরেক রোগীর মৃত্যু হয় হাসপাতালের বারান্দায়। অভিযোগ রয়েছে, সেদিন জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক হাসপাতালে না থেকে ব্যক্তিগত কাজে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন, আর ডিএমএফ (ড্রেসার মেডিকেল ফার্মাসিস্ট)-কে জরুরি বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিলেন।
ফুলবাবুর মা বকুল রাণী দাস বলেন, ‘ভর্তি করানোর পর আমার ছেলে মুখ দিয়ে রক্ত ফেলছিল। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। ডাক্তার ও নার্সদের বারবার খুঁজেও কেউ পাইনি।’
রোগীর সঙ্গে আসা পল্লী চিকিৎসক বাদল সরকার জানান, “রাত ৯টার দিকে ভর্তি করানোর পর দীর্ঘ সময়েও কোনো চিকিৎসক আসেননি। রোগী অক্সিজেন পাচ্ছিল না, অথচ নার্সরা শুধু চিৎকার করছিল। পরে দেখা গেল, মৃত রোগীকে ইসিজি ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।”
সিনিয়র স্টাফ নার্স কোহিনুর খাতুন বলেন, “আমরা বসে ছিলাম না। একসঙ্গে সাতজন রোগী আসায় চাপ ছিল বেশি। তবুও আমাদের অবহেলা ছিল না।”
দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. আব্দুল হান্নান বলেন, “আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। বিস্তারিত জানতে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে কথা বলুন।”
তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন বলেন, “রোগীকে রেফার্ড করা হয়েছিল, কিন্তু তারা নিয়ে যায়নি। আমরা দায়িত্বে অবহেলা করিনি।”
এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রোগীদের স্বজনদের দাবি, দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।